সমকামিতার অভিযোগ ও দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক মুনতাসির মাহমুদকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছে।
রোববার (১২ অক্টোবর) দলের দপ্তর সেলের সদস্য সাদিয়া ফারজানা দিনা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, “আপনার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেনের নির্দেশে আপনাকে দলের সকল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হলো।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে এবং মুনতাসির মাহমুদকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিতে হবে— কেন তাকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়া হবে না। এ ব্যাখ্যা দলের কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল-আমিনের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অব্যাহতির এই আদেশের অনুলিপি ইতোমধ্যে দলের আহ্বায়ক, সদস্যসচিব এবং শৃঙ্খলা কমিটির প্রধানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, মুনতাসির মাহমুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ— তিনি পশ্চিমা এলজিবিটিকিউ (LGBTQ) সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মতাদর্শ ও এজেন্ডা রাজনৈতিকভাবে বাস্তবায়নের পক্ষে কাজ করছেন । এ বিষয়ে দলের কয়েকজন সদস্য ও নেতৃবৃন্দ অসন্তোষ প্রকাশ করলে বিষয়টি কেন্দ্রীয় পর্যায়ে পৌঁছে যায়। অভিযোগ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। এনসিপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন, যা দলীয় ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করে।
বিতর্ক বাড়তে থাকায় দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। এনসিপির এক মুখপাত্র জানান, “আমরা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুনতাসির মাহমুদের বিরুদ্ধে সাময়িক অব্যাহতির সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।” তিনি আরও বলেন, “দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা ও ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে আমরা কোনো ধরনের অসদাচরণ বা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সহ্য করব না। তদন্ত শেষে প্রমাণিত হলে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মুনতাসির মাহমুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ কেউ অভিযোগকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন, আবার অনেকেই এনসিপির দ্রুত পদক্ষেপকে “দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার উদাহরণ” বলে মন্তব্য করেছেন।
অন্যদিকে, কিছু মানবাধিকারকর্মী অভিযোগ করেছেন যে, ব্যক্তিগত জীবন বা মতামতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। তারা মনে করেন, “এ ধরনের অভিযোগ ও সাময়িক অব্যাহতি ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের প্রশ্নও উত্থাপন করে।”
এ বিষয়ে মুনতাসির মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। দলের দপ্তর সেল জানিয়েছে, তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা জমা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
দলের শৃঙ্খলা কমিটি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এনসিপির নেতৃত্ব বলছে, তদন্তের ফলাফলের ওপর নির্ভর করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে— তা হতে পারে স্থায়ী অব্যাহতি বা পুনর্বহাল।
Leave a comment