গত ১৫ বছর শেয়ারবাজারে অনিয়ম ও অদক্ষতার কারণে এটি বিকাশ লাভ করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত “পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি এবং করণীয়” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএসই চেয়ারম্যান জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দুর্বল কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার যোগ্যতাও হারিয়েছে। গত ১০ বছরে ৬০০ কোটি টাকার দুর্বল আইপিও এসেছে, যেখানে ভালো কোম্পানির সংখ্যা ছিল খুবই কম।
তিনি বলেন, “বিভিন্ন দেশে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান ভূমিকার মাধ্যমে হয়। অথচ ডিএসই সেই ভূমিকায় কার্যকর হয়নি। ভবিষ্যতে এটি সব অংশীজন নিয়ে শেয়ারবাজার উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবে।”
ডিএসই চেয়ারম্যান শেয়ারবাজারের প্রধান সমস্যাগুলো তুলে ধরেন:
সুশাসনের অভাব।
দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার ঘাটতি।
শীর্ষ পদগুলোর শূন্যতা।
বিদেশি বিনিয়োগ মাত্র এক শতাংশেরও কম।
তিনি আরও বলেন, অতীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিএসইর ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিজেই অপারেটরের ভূমিকা পালন করেছিল। তবে বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জের কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ করবে না।
ডিএসই চেয়ারম্যান জানান, দুর্বল কোম্পানিগুলো তালিকাচ্যুত করার জন্য কোনো হালনাগাদ আইন নেই। ফলে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তালিকাচ্যুতির জন্য বাস্তবভিত্তিক আইন প্রণয়ন এবং কারসাজি প্রতিরোধে সার্ভিল্যান্স সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে।
চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, শিল্পে অর্থায়নে সরকারের ফোকাস সবসময় ব্যাংকিং খাতে ছিল। অথচ দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের প্রধান উৎস শেয়ারবাজার হওয়া উচিত। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, শেয়ারবাজারকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখতে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, “নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্টক এক্সচেঞ্জের কাজে হস্তক্ষেপ না করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে।”
ডিবিএর (ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সংগঠন) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “শেয়ারবাজারে বিকেন্দ্রীকরণের পরিবর্তে কেন্দ্রীকরণ চলছে। লিস্টিং আইন থাকলেও ডিলিস্টিং আইন নেই, যা সংস্কারের প্রয়োজন।”
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। তারা মনে করেন, দক্ষতার ঘাটতি, অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারাচ্ছেন। শেয়ারবাজারকে দীর্ঘমেয়াদে একটি কার্যকর অর্থায়নের মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলতে হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারের অগ্রাধিকারে শেয়ারবাজার রাখা এবং এ খাতের সংস্কারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার সময় এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Leave a comment