আগ্রা, ১০ মে, ১৬১২। সমগ্র মুঘল ইতিহাসে ১০ মে, ১৬১২ তারিখটি একটি আবেগঘন ও মহিমাময় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই দিনে মুঘল রাজপুত্র খুররম — যিনি পরবর্তীকালে “শাহ জাহান” নামে সম্রাট হিসেবে পরিচিত হন — বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তাঁর প্রাণপ্রিয় আরজুমান্দ বানু বেগমের সঙ্গে, যিনি ইতিহাসে “মুমতাজ মহল” নামে অমর হয়েছেন।
তাদের এই বিবাহ শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এটি ছিল ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আত্মিক সংযোগের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। বিয়ের দিন আগ্রার রাজপ্রাসাদে আয়োজন করা হয় এক অভূতপূর্ব রাজকীয় অনুষ্ঠান। সোনার জলমহল, রত্নখচিত পোশাক, আতরের মিষ্টি গন্ধ ও রাজসিক ভোজে মুখরিত হয়ে ওঠে সারা দরবার। উপস্থিত ছিলেন সাম্রাজ্যের অভিজাত, আমির-উমরা, শিল্পী ও কবিগণ।
এই দিনটির গুরুত্ব ইতিহাসে আরও বেড়ে যায় কারণ শাহ জাহান ও মুমতাজ মহলের সম্পর্ক ছিল নিছক রাজনৈতিক জোট নয়, বরং এক গভীর প্রেম ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার দৃঢ় ভিত্তির উপর গড়ে ওঠা দাম্পত্য। পাঁচ বছর আগে, খুররম যখন প্রথমবার আরজুমান্দকে দেখেন, তখনই তাঁদের সম্পর্কের বীজ রোপিত হয় — যার পূর্ণতা পায় এই বিয়েতে।
শাহ জাহান তাঁর স্ত্রীকে শুধু রাজসম্মানে সম্মানিত করেননি, বরং তাঁর প্রতি প্রেমের নিদর্শনস্বরূপ পরবর্তীতে গড়ে তুলেছিলেন তাজমহল — একটি বিশ্ববিখ্যাত স্মৃতিসৌধ, যা আজও প্রেমের সর্বোচ্চ প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
এই রাজবিবাহ যেন কেবল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত নয়, বরং পরবর্তী শতাব্দীগুলোর জন্য এক অনুপ্রেরণার প্রতীক — যেখানে রাজনীতি ও প্রেম একই সুরে গাঁথা হয়েছে।
Leave a comment