রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে এশিয়ার শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানির মালিকানাধীন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ। আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এই তেল আমদানির কারণে ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি কিনে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে মস্কোকে সাহায্য করছে।
২০২১ সালে রিলায়েন্সের গুজরাটের জামনগর শোধনাগারে রাশিয়া থেকে আসা তেলের পরিমাণ ছিল মোট আমদানির মাত্র ৩ শতাংশ। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ২০২৫ সালে তা গড়ে ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে রাশিয়া থেকে এসেছে ১ কোটি ৮৩ লাখ টন অপরিশোধিত তেল, যার বাজারমূল্য ৮৭০ কোটি ডলার। গত বছরের তুলনায় এই পরিমাণ ৬৪ শতাংশ বেশি।
রিলায়েন্স ছাড়াও ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বেসরকারি তেল শোধনাগার নায়ারা এনার্জি তাদের আমদানির গড়ে ৬৬ শতাংশ রাশিয়া থেকে সংগ্রহ করেছে। তবে পরিমাণে তা রিলায়েন্সের এক-তৃতীয়াংশ। বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল আমদানির ফলে ভারতের বৈদেশিক ঘাটতি কমেছে এবং বৈশ্বিকভাবে দেশটি নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে।
তেলের মূল্যসীমা কার্যকর হওয়ার পর রাশিয়া শত শত জাহাজের ‘ছায়া বহর’ তৈরি করেছে, যাতে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করা যায়। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) জানায়, রিলায়েন্স ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ৮ হাজার ৫০৯ কোটি ডলারের পরিশোধিত তেল রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে সেই দেশগুলোতে, যারা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও রিলায়েন্সের অন্যতম বড় ক্রেতা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, শুল্ক আরোপের আড়ালে ট্রাম্প আসলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নীতি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
তবে ভবিষ্যতে বড় পরিবর্তনের আভাস মিলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে, তারা রাশিয়ার তেল থেকে প্রক্রিয়াজাত কোনো পণ্য আমদানি করবে না। এতে রিলায়েন্সের জেট ফুয়েল রপ্তানি বড় ধাক্কা খেতে পারে। যদিও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে রিলায়েন্স রাশিয়ার রসনেফটের সঙ্গে ১০ বছরের একটি নতুন চুক্তি করেছে, যা নিষেধাজ্ঞার বাস্তবতায় কীভাবে কার্যকর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
Leave a comment