১৯৯৮ সালের ১১ মে—তারিখটি ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের কূটনৈতিক ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী দিন। সেদিন ভারতের মরুপ্রধান রাজ্য রাজস্থানের পোখরানে ভূগর্ভস্থ স্থানে একযোগে তিনটি পারমাণবিক অস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালায় ভারত সরকার। এই পরীক্ষা শুধু ভারতের সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শনের নজির গড়েনি, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও কৌশলগত ভারসাম্যে এক বিশাল পরিবর্তনের সূচনা করে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার পোখরানে এই গোপন পারমাণবিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। কোডনেম ছিল ‘অপারেশন শক্তি’। দিনের প্রথম ভাগেই পরীক্ষাগুলো সফলভাবে সম্পন্ন হয় এবং বিকেল নাগাদ দেশ ও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এই পরীক্ষার খবর। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মর্যাদা দাবি করে।
এই ঘটনাটি বিশ্ব রাজনীতিতে বিস্ময় জাগায়। পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান, ভারতের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। জাতিসংঘও উদ্বেগ প্রকাশ করে। তবে ভারতীয় সরকার এই পরীক্ষাকে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রয়াস বলে ব্যাখ্যা দেয়।
পরীক্ষার স্থান পোখরান ছিল ১৯৭৪ সালের ‘স্মাইলিং বুদ্ধ’ নামের প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষার স্থানও। তবে ১৯৯৮ সালের পরীক্ষাগুলো ছিল আরও উন্নত প্রযুক্তির এবং শক্তিশালী বিস্ফোরণসম্পন্ন। ভারত জানায়, এই পরীক্ষায় একটি ফিউশন (হাইড্রোজেন) বোমা এবং দুটি ফিশন (পারমাণবিক বিভাজনভিত্তিক) বোমা ব্যবহার করা হয়।
এই ঘটনার পর দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক প্রতিযোগিতা নতুন মাত্রা পায়। পাকিস্তান কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই চাগাই পাহাড়ে নিজস্ব পারমাণবিক পরীক্ষার মাধ্যমে এর জবাব দেয়। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের কেন্দ্রে পরিণত হয়।
আজ এই দিনটি স্মরণে আসে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির সেই রুদ্ধশ্বাস মুহূর্তগুলোকে, যখন পরমাণু অস্ত্রের ছায়ায় দুই প্রতিবেশী দেশের দ্বন্দ্ব ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন রূপ নেয়। পোখরানের বিস্ফোরণ কেবল ভারতের আত্মপ্রকাশ নয়, বরং উপমহাদেশে নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক কৌশলের এক নতুন যুগের সূচনা হিসেবেই ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।
Leave a comment