বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী রদবদলের সূচনা হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল নিশ্চিত করেছেন, একটি প্রয়োজনীয় সরকারি পরিপত্র শিগগিরই জারি করা হবে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সব ধরণের রাজনৈতিক তৎপরতা—সাইবার জগৎসহ—পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।
শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। আইন উপদেষ্টা জানান, বিচারাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধনী এনে আওয়ামী লীগ এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। সংশোধনের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালকে এখন রাজনৈতিক দল বা তাদের অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধেও শাস্তি ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, এবং ‘জুলাই আন্দোলন’-এর নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতা, দমন-পীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে যতদিন না বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়।
উল্লেখ্য, এর আগেই সরকার আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকেও একই আইনের আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। শনিবার রাতে এই ঘোষণার পর রাজধানীর শাহবাগ ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল এলাকা জুড়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারীরা। তারা ‘এই মুহূর্তে খবর এলো, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো’—এই স্লোগান দেন।
এদিকে, আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এছাড়াও, সংশোধিত আইনে আওয়ামী লীগ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু হবে বলে জানা গেছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগ এবং এনসিপি, জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলোর দাবির মুখে এমন এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত এসেছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
Leave a comment