৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করার পরও শেষ পর্যন্ত দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন ৭৩ বছর বয়সী ভারতীয় নারী হারজিত কর। পাঞ্জাবের অস্থিরতা এড়িয়ে ১৯৯১ সালে দুই ছেলেকে নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান তিনি। সান ফ্রান্সিসকো বে এলাকার হারকিউলিস শহরে দুই দশক ধরে শাড়ির দোকানে সেলাইয়ের কাজ করেছেন, নিয়মিত কর দিয়েছেন, সমাজে নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন। তবু আশ্রয়ের আবেদনগুলো প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় ৮ সেপ্টেম্বর আইসিই কর্মকর্তারা তাঁকে আটক করে। প্রায় দুই সপ্তাহ পর, ২২ সেপ্টেম্বর কোনো বিদায় নেওয়ার সুযোগ না দিয়েই তাঁকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আইনজীবী দীপক আহলুয়ালিয়া অভিযোগ করেছেন, আটক অবস্থায় হারজিতকে অমানবিক পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছিল। ৬০–৭০ ঘণ্টা তাঁকে বিছানা ছাড়া মেঝেতে ঘুমাতে হয়, ওষুধের পরিবর্তে দেওয়া হয় বরফ, খাবারেও দেওয়া হয় বাধা। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক অভিযোগ নেই। সান ফ্রান্সিসকোতে শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, তাঁরা বিক্ষোভে নামেন।
২০০৫ সালে অভিবাসন আদালত তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়নের আদেশ দিলেও এত বছর পর হঠাৎ বাস্তবায়িত হওয়া এ সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছেন অনেকে। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতি এই ঘটনার পেছনে দায়ী বলে মনে করছেন সমালোচকেরা। তাদের অভিযোগ, “খারাপ মানুষ” তাড়ানোর নামে নিরপরাধ ও দীর্ঘদিন বৈধ প্রক্রিয়ায় বসবাসকারী অভিবাসীরাও আজ নির্বাসনের শিকার হচ্ছেন।
হারজিত করের গল্প যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থার জটিলতা ও কঠোরতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। দেশটির আদালতে বর্তমানে ৩৭ লাখের বেশি আশ্রয় মামলা ঝুলে আছে। এর মাঝেই একা, অসহায় ও বৃদ্ধ এই নারীকে স্বদেশে ফিরতে হলো—যেখানে হয়তো আর কোনো আশ্রয়ই অবশিষ্ট নেই।

Leave a comment