রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজের (১৫) মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়ি নাটোরে পৌঁছেছে । মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে সদর উপজেলার বড়গাছা গ্রামে লাশ পৌঁছানোর পর পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। দুপুরে জানাজা শেষে মা–মেয়েকে দাফন করা হবে বলে স্বজনরা জানিয়েছে ।
এর আগে সোমবার দুপুরে মোহাম্মদপুরের ভাড়া বাসায় এই মা-মেয়েকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। হত্যাকাণ্ডের সময় বাবা এম জেড আজিজুল ইসলাম ছিলেন কর্মস্থলে। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। স্কুল শেষে বাসায় ফিরে স্ত্রীর ও সন্তানের রক্তাক্ত লাশ দেখে ভেঙে পড়েন তিনি।
ঘটনার পরপরই পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গৃহকর্মী ‘আয়েশা’কে সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করেছে। মাত্র চারদিন আগে ভবনের দারোয়ান মালেকের মাধ্যমে মেয়েটি বাসায় আসে। বোরখা পরিহিত ওই নারী নিজেকে রংপুরের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেয় এবং জানায়, বাবা-মা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।
ফুটেজে দেখা যায়,সকাল ৭টা: নাফিসার বাবা বাসা থেকে বের হয়ে যান। সকাল ৭টা ৫১ মিনিট: বোরখা পরে লিফটে সাত তলায় উঠে যায় গৃহকর্মী আয়েশা। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট: নাফিসার স্কুল ড্রেস পরেই বাসা থেকে বের হয়ে যায় সে—মুখে মাস্ক, কাঁধে ছিল স্কুল ব্যাগ।
পুলিশের ধারণা, হত্যার পর আয়েশা বাথরুমে গিয়ে গোসল করে রক্ত পরিষ্কার করে নাফিসার ইউনিফর্ম পরে বেরিয়ে যায়, যাতে কেউ তাকে সন্দেহ না করে। পরে তল্লাশিতে বাথরুম থেকে একটি সুইচ গিয়ার ও ধারালো ছুরি উদ্ধার করে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, এই অস্ত্র দিয়েই মা ও মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, বাসার ভেতরে ধস্তাধস্তির চিহ্ন রয়েছে। দেয়াল, ফ্লোর, আলমারি—সব জায়গায় রক্তের দাগ। আলমারি ও ভ্যানিটি ব্যাগ তছনছ অবস্থায় পাওয়া গেছে, যা লুটপাটের সম্ভাবনাও সামনে আনছে।
তেজগাঁও বিভাগের ডিসি ইবনে মিজান সাংবাদিকদের বলেন, “হত্যার আগে-পরে বাসায় ওই গৃহকর্মীর কার্যকলাপ আমরা সিসিটিভিতে পর্যবেক্ষণ করছি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে, যাচাই-বাছাই চলছে।” দারোয়ান মালেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
নিহত লায়লা আফরোজের স্বামী আজিজুল ইসলাম জানান,“আমাদের বাসায় একজন কাজের মহিলা প্রয়োজন ছিল। চারদিন আগে বোরকা পরা একটি মেয়ে দারোয়ানের মাধ্যমে আসে। স্ত্রী তার সঙ্গে কথা বলে কাজে রেখে দেয়। বয়স আনুমানিক ২০ বছর বলেছিল।”
তিনি আরো জানান, মেয়েটির শরীরে আগুনে পোড়ার দাগ ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকারী খুব পরিকল্পিতভাবে কাজ করেছে। বাথরুমে গিয়ে গোসল করা, কাপড় পরিবর্তন, ইউনিফর্ম পরে বের হওয়া—সবকিছুই ঠাণ্ডা মাথার কাজ। এখন পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজে আয়েশা ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি, তবে পুলিশ আর কেউ জড়িত ছিল কি না সেটিও যাচাই করছে। তার সম্ভাব্য অবস্থান চিহ্নিত করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে।
Leave a comment