মে দিবসে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পবিরোধী শত শত বিক্ষোভ, যেখানে দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতিমালা এবং কর্তৃত্ববাদী প্রবণতার বিরুদ্ধে। ‘৫০৫০১’ নামে একটি বামঘেঁষা সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ৫০টি বিক্ষোভের মাধ্যমে একটি ঐক্যবদ্ধ বার্তা দেওয়া—যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষার ডাক।
বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য মতে, ট্রাম্প প্রশাসন ধনীদের স্বার্থে কাজ করছে এবং সাধারণ নাগরিকদের কণ্ঠরোধ করছে। পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া, নিউইয়র্ক, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলেস, টেক্সাসের হিউস্টনসহ বড় শহরগুলোতে ছিল ব্যাপক উপস্থিতি। ছোট শহরগুলোর রাস্তাও রীতিমতো গর্জে উঠেছে শ্রমিক, শিক্ষার্থী, অভিবাসী এবং অধিকারকর্মীদের স্লোগানে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষা ইউনিয়নের সদস্য শেন রিডল বলেন, ‘আমরা মনে করি, অতি ধনীরা দেশটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে। শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্তদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এই অবস্থা চলতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্র একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে রূপ নিতে পারে।’
লস অ্যাঞ্জেলেসে আয়োজিত মিছিল ছিল অন্যতম বৃহৎ, যেখানে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। হাতে ছিল নানা প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড—‘শ্রমিকদের কণ্ঠ রোধ করা চলবে না’, ‘ট্রাম্প নয়, গণতন্ত্র চাই’, ‘ধনীদের নয়, জনগণের রাষ্ট্র চাই’—এই স্লোগানগুলো বিক্ষোভের মূর্ত রূপ হয়ে উঠেছিল।
হিউস্টনের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বার্নার্ড স্যাম্পসন বলেন, ‘ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিতে যাদের ঠেলে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তারাই কিন্তু আমাদের রেস্তোরাঁয় কাজ করে, ঘরবাড়ি বানায়। এদের বাদ দিলে আমেরিকা নিজের শ্রমশক্তি হারাবে।’
এই বিক্ষোভ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ফ্রান্স, ফিলিপাইন, জার্মানিসহ বিশ্বের বহু দেশে মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত র্যালিতে ট্রাম্পবিরোধী বার্তা উচ্চারিত হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি নিয়েও অসন্তোষ বাড়ছে।
এদিকে, বিক্ষোভের মধ্যেই ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি হবেন যিনি তিনবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর এমন মন্তব্য বিরোধীদের আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য মতে, শ্রমিকদের অধিকার হরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন শুধু মে দিবসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি ট্রাম্পবিরোধী দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ আন্দোলনের সূচনা হতে পারে।
Leave a comment