মেক্সিকো জুড়ে মৌসুমি ঝড় ‘প্রিসিলা’ ও ‘রেমন্ড’-এর কারণে সৃষ্ট প্রবল বর্ষণ, ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ২৭ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছে , এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। রোববার (১২ অক্টোবর) মেক্সিকোর কেন্দ্রীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দফতর এক সরকারি বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়। সংস্থাটি জানায়, দেশের পাঁচটি রাজ্য এই দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের বিবৃতি অনুসারে, সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় ভেরাক্রুজ রাজ্যে, যেখানে ১৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য রাজ্যগুলোর মধ্যে হিদালাগোতে ১৬ জন, পুয়েবলাতে ৯ জন এবং কুয়েরেতারোতে ১ জন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনো উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে।
দেশটির জাতীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ৬ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত টানা চার দিন ধরে প্রবল বর্ষণ হয় মেক্সিকোর বিভিন্ন অঞ্চলে। শুধু ভেরাক্রুজ রাজ্যেই তিন দিনে ৫৪০ মিলিমিটার বা ২১ ইঞ্চিরও বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এই বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস, নদী উপচে পড়া এবং গ্রামীণ জনপদে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বহু এলাকায় রাস্তা-ঘাট, সেতু এবং বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
দুর্যোগ দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়, প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় অনেক এলাকায় গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে, যার ফলে শতাধিক গ্রাম বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে। “অনেক স্থানে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি বাড়িঘরের ওপর পড়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ৬ থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত চলা বন্যা ও ঝড়ে মেক্সিকোর ৫৫টি শহরের অন্তত ১৬ হাজার বাড়িঘর সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। বর্তমানে ৩ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
সামরিক বাহিনী ও জরুরি সেবাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম চালাচ্ছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কয়েকটি পাহাড়ি গ্রামে ভারী কাদা ও ধসে পড়া রাস্তাগুলোর কারণে এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শিনবাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ এক পোস্টে বলেছেন, “রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় দেশজুড়ে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে সহায়তা করা হবে, কেউ বাদ যাবে না।”তিনি আরও জানান, সেনাবাহিনী, ন্যাশনাল গার্ড এবং স্থানীয় প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলিতে হাজার হাজার মানুষ বর্তমানে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। জরুরি খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা এবং রেড ক্রসের স্থানীয় ইউনিটগুলোও উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিচ্ছে। একজন ত্রাণকর্মী রয়টার্সকে জানান, “ভেরাক্রুজ ও হিদালাগোর বহু এলাকা এখনো পানির নিচে। আমরা নৌকায় করে খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছি। অনেক পরিবার তাদের সবকিছু হারিয়েছে।”
আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেক্সিকোতে মৌসুমি ঝড়ের প্রকোপ ক্রমেই বাড়ছে। ভবিষ্যতে আরও ঘনঘন এবং তীব্র ঝড় ও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। মেক্সিকো ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রিসিলা ও রেমন্ডের আঘাতে বিপর্যস্ত মেক্সিকো এখন উদ্ধার, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের কঠিন লড়াইয়ে নামছে। মৃত ও নিখোঁজদের পরিবার শোকে স্তব্ধ
Leave a comment