কক্সবাজারের মহেশখালীতে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ কুখ্যাত সন্ত্রাসী চক্র ‘জিয়া বাহিনী’র ৯ সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এই অভিযান পরিচালিত হয়। কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক রাতে গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানান, “গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, মহেশখালীর কালারমারছড়ার সামিরা ঘোনা, মোহাম্মদ শাহ ঘোনা, নয়া পাড়া ও টেকপাড়া এলাকায় ‘জিয়া বাহিনী’ নামে পরিচিত একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী স্থানীয় জনগণকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লবণের মাঠ ও চিংড়ি ঘের দখল করে রেখেছে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই সন্ত্রাসী চক্র এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিল। কেউ তাদের দখল বা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হতো। আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের কাছে সহায়তা চান।
কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর সদস্যরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১টি বিদেশি পিস্তল, ৮টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ৮ রাউন্ড গুলি, ১৫ রাউন্ড কার্তুজ, ২টি ম্যাগাজিন, ১৩টি দেশীয় অস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেন।
এ সময় ‘জিয়া বাহিনী’র ৯ সদস্যকে আটক করা হয়। তারা হলো— মোহাম্মদ আলী (৫৪), মানিক (২৭), গিয়াস উদ্দিন (৫৯), সালাউদ্দিন (২৭), শহিদুল্লাহ (৫২), সবুজ (২৭), আতিকুর রহমান (৩২), রিজওয়ান (২৪) এবং নাদিম উদ্দিন (৩৫)। এর মধ্যে সাতজন কালারমারছড়া ইউনিয়নের এবং দুজন হোয়ানক ইউনিয়নের বাসিন্দা।
কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তা সিয়াম-উল-হক জানান, আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ‘জিয়া বাহিনী’র সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছে। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় লবণ উৎপাদক ও চিংড়ি চাষিদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করত।
তিনি বলেন, “জব্দকৃত অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরঞ্জামসহ আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা তাদের বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য পাওয়ার আশা করছি।”
অভিযানের পর স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানা গেছে। অনেক দিন ধরে সন্ত্রাসীদের ভয় ও নিপীড়নে এলাকার মানুষ স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছিলেন না। এখন তারা কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা সিয়াম-উল-হক আরও বলেন, “সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্মূলে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এই ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে। মহেশখালী ও আশপাশের উপকূলীয় এলাকায় নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘জিয়া বাহিনী’ নামের এই সন্ত্রাসী চক্রটি গত কয়েক বছর ধরে মহেশখালী ও টেকনাফ উপকূলজুড়ে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বে জড়িত। চক্রটির মূল নেতা ‘জিয়া’ বর্তমানে পলাতক বলে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অতীতে এই বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
এই সফল অভিযানের মধ্য দিয়ে মহেশখালীতে সন্ত্রাস ও অস্ত্রবাণিজ্যের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অবস্থান আবারও স্পষ্ট হলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা আশা করছেন, এই অভিযান ভবিষ্যতে উপকূলীয় অঞ্চলের অন্যান্য অবৈধ অস্ত্রচক্র দমনেও বড় ভূমিকা রাখবে।
Leave a comment