ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনা ঘিরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা। তারা দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে অঞ্চলটি আরও বিপজ্জনক সংঘাতের দিকে না এগোয়। তবে এ অবস্থায় ইসরায়েল প্রকাশ্যে ভারতের পক্ষাবলম্বন করেছে, ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করার কথা বলেছে তারা।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের অন্তত নয়টি স্থানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরপরই ইসলামাবাদ থেকেও পাল্টা গোলাবর্ষণ শুরু হয়। এতে পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত ২৬ জন এবং ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ১০ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে উভয় দেশের প্রশাসন। ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে রয়েছে মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক ভবন। লাহোরের নিকটবর্তী মুরিদকে একাধিক ভবন বিধ্বস্ত হয় এবং সেখানে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের নেতারা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, ভারতের সামরিক পদক্ষেপে তিনি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং উভয় দেশকে ‘সর্বোচ্চ সামরিক সংযম’ দেখাতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করেছেন, এই ধরনের সংঘাতের ভার বিশ্ব সম্প্রদায়ের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ পরিস্থিতিকে ‘হতাশাজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তান বহু দশক ধরে সংঘাতে জড়িয়ে আছে এবং তিনি আশা করেন, এই উত্তেজনা দ্রুত প্রশমিত হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছেন, তিনি পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারট এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান আমরা বুঝি, তবে দুই দেশকেই সংযত থাকতে হবে। বেসামরিকদের সুরক্ষা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।” একইসঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান একটি বিবৃতিতে জানান, দিল্লি ও ইসলামাবাদকে উত্তেজনা হ্রাস ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের অবস্থান অন্য সবার থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম। ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন জানিয়ে ভারতের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছে তেলআবিব। ভারতের রাজধানীতে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রুভেন আজার এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েল বিশ্বাস করে যে, ভারত সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় নিজের প্রতিরক্ষার পূর্ণ অধিকার রাখে।”
এদিকে চীন ও রাশিয়াও দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এই ধরণের সামরিক উত্তেজনা বন্ধে কূটনৈতিক উদ্যোগকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তের এ সামরিক উত্তেজনা শুধুমাত্র দুই দেশের নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তাই পরিস্থিতি শান্ত করতে এখনই সক্রিয় কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
Leave a comment