ভারতের সামরিক অভিযানের জবাবে পাকিস্তানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যেই আশার আলো দেখালেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। আজ শনিবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ওরা থামলে আমরাও থামব। আমরা ধ্বংস কিংবা সম্পদের অপচয় চাই না।’
দুই দেশের মধ্যে টানটান উত্তেজনার মধ্যে এই বক্তব্য শান্তির ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইসহাক দার জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বর্তমান সঙ্কট নিরসনে আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। তাঁর বিশ্বাস, এর ফলে আলোচনার দরজা খুলবে।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ভারতের ‘অভিযান সিঁদুর’ নামের অভিযানে পাকিস্তানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আজ ভোরে পাল্টা জবাব দিয়েছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বুনইয়ান-উন-মারসুস’। হামলায় ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটি, অস্ত্রভাণ্ডার ও লজিস্টিক কেন্দ্রে আঘাত হানার দাবি করেছে পাকিস্তান।
ভারত এরই মধ্যে এই হামলার জবাব দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে। তবে দুই দেশই কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকার কথা বলছে। পাকিস্তান বলেছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশিরভাগ ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে পেরেছে।
ইসহাক দার বলেন, ‘ভারতের যদি সামান্যতম বোধবুদ্ধি থাকে, তবে তাদের এখনই থামা উচিত। ওরা থামলে আমরাও থামব। যুদ্ধ দিয়ে কিছুই অর্জিত হয় না। দুই দেশের অর্থনীতির বাস্তবতা ভিন্ন। আমরা কোনো আধিপত্য চাই না, চাই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।’
তিনি আরও জানান, গত কয়েক দিনে বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর কূটনৈতিক যোগাযোগ হয়েছে এবং তা অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই সংলাপ আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি শান্ত করতে ভূমিকা রাখবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ফোন করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। রুবিও উভয় পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনের উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানান এবং আলোচনার সূচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রস্তাব দেন।
এদিকে, জি-৭ জোট এক বিবৃতিতে ভারত ও পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। তারা সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে পারমাণবিক ঝুঁকি থেকে মুক্তির পথ খুঁজে নিতে দুই দেশকে উৎসাহিত করেছে।
চীনও আজ একটি বিবৃতিতে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, তারা ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানে ‘গঠনমূলক ভূমিকা’ রাখতে প্রস্তুত।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসহাক দারের বক্তব্য ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক উদ্যোগ দুই দেশের যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে সরে আসার সুযোগ তৈরি করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, ভারত কতটা ইতিবাচক সাড়া দেয় এই শান্তির আহ্বানে।
Leave a comment