ভারতে ভিসা আবেদন সংক্রান্ত জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির মার্কিন দূতাবাস। দূতাবাস জানিয়েছে, ভুয়া অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে (বট অ্যাকাউন্ট) ভিসার আবেদন জমা দেওয়া হয়েছিল, যা নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। এ ঘটনায় প্রায় ২ হাজার ভারতীয়ের ভিসার আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানায়, বেশ কিছু ভিসা আবেদন জালিয়াতির মাধ্যমে জমা পড়েছে, যা নিয়মবহির্ভূত। এসব জাল অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দূতাবাস স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের জালিয়াতি ধরা পড়লে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে যাওয়ার জন্য বি১ এবং পর্যটন, চিকিৎসা বা ব্যক্তিগত ভ্রমণের জন্য বি২ ভিসা প্রয়োজন হয়। তবে সম্প্রতি এই দুটি ভিসার অনুমোদন প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। নিয়ম কঠোর করার পাশাপাশি ভিসা নবায়নের ক্ষেত্রেও দীর্ঘ সময় অপেক্ষার নিয়ম চালু করা হয়েছে। এখন থেকে ভারতীয়দের মার্কিন দূতাবাস বা উপদূতাবাসে সরাসরি ইন্টারভিউ দিতে হবে, যা ভিসা নবায়ন প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেআইনি অভিবাসন ও ভিসা জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন। গত দুই মাসে তিন দফায় কয়েক শ ভারতীয় অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
ভিসা ও পাসপোর্ট জালিয়াতির ঘটনায় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মার্কিন দূতাবাস দিল্লি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং এক সপ্তাহের মধ্যেই বড় ধরনের জালিয়াতি চক্রের সন্ধান পায়। তদন্তে উঠে আসে, ভুয়া কাগজপত্র তৈরির জন্য একাধিক এজেন্ট আবেদনকারীদের কাছ থেকে ১৫ লাখ রুপি পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে।
এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩১৮, ৩৩৬, ৩৪০ ধারা এবং তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৬৬(ডি) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩১ জনেরও বেশি অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং পুলিশের তদন্ত চলমান রয়েছে।
ভারতে মার্কিন দূতাবাস স্পষ্ট করে জানিয়েছে, ভবিষ্যতে যারা নিয়ম ভঙ্গ করবে বা জাল নথি ব্যবহার করে আবেদন করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে, বৈধ আবেদনকারীদের সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিসা দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এই ঘটনায় ভারতীয় অভিবাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা ও ভিসা প্রতারণার চক্র নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের জালিয়াতি বন্ধে আরও কঠোর নজরদারি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন।
Leave a comment