ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক পাল্টাপাল্টি সামরিক হামলার মধ্যেই ভারতীয় গণমাধ্যমের আচরণ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে আফ্রিদি বলেন, “ভারতের গণমাধ্যম এখন আর বিশ্বাসযোগ্য সংবাদকক্ষ নয়, বরং এটি কার্টুন নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে।” দুই দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনার মাঝেই একই দিনে ভারতের আইপিএল ও পাকিস্তানের পিএসএল স্থগিত হয়ে যাওয়ায় আফ্রিদির এই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে একটি বন্দুকধারীর হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ৬ মে ভারত একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পরদিনই পাকিস্তানে পাল্টা ড্রোন হামলা হয়, যার একটি আঘাত হানে রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সে। এই ঘটনায় পেশোয়ার ও করাচির মধ্যকার নির্ধারিত পিএসএল ম্যাচ স্থগিত হয়ে যায়। পরে জানানো হয়, পাকিস্তানে আর কোনো ম্যাচ না হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজনের চিন্তাভাবনা চললেও অবশেষে পিএসএল পুরোপুরি স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ধর্মশালায় আইপিএলের একটি ম্যাচও মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয় নিরাপত্তাজনিত কারণে। এরপর আজ ভারতের ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই ঘোষণা দেয়, চলমান আইপিএল এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত থাকবে এবং বিদেশি খেলোয়াড়দের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
এই প্রেক্ষাপটে আফ্রিদির এক্স পোস্টে উঠে আসে হতাশা ও ক্ষোভ—“খেলাধুলা সীমান্ত, ধর্ম আর রাজনীতির ঊর্ধ্বে। আজ তা আঘাতের মুখে—পিএসএল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে দুবাইয়ে, আইপিএল স্থগিত আর রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামের বাইরে ভারতীয় ড্রোন হামলা। একসময় ক্রিকেট আমাদের একত্র করেছিল। আজ তা সংঘাতের আঘাতে রক্তাক্ত।” পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, ভারতের সংবাদমাধ্যম সাংবাদিকতার নীতিবোধ থেকে সরে গিয়ে এখন ‘ব্যঙ্গচিত্রে’ পরিণত হয়েছে।
আফ্রিদির ভাষ্য, “ভারতীয় গণমাধ্যম সত্যনিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার মতো মূল্যবোধের বদলে বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গা হারিয়ে কার্টুন নেটওয়ার্কে রূপ নিয়েছে।” আফ্রিদি আশা প্রকাশ করে বলেন, “স্টাম্পগুলো আবার দাঁড়াক। শুধু খেলার জন্য নয়, শান্তির জন্য।”
বর্তমানে ভারতে শহীদ আফ্রিদির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, আফ্রিদিসহ পাকিস্তানের কয়েকজন ক্রিকেটারের অ্যাকাউন্ট ভারতে আইনগত অনুরোধে সীমিত করা হয়েছে। বাবর আজম, শাহিন আফ্রিদি ও মোহাম্মদ রিজওয়ানও এর আওতায় রয়েছেন। ভারতীয় ব্যবহারকারীরা তাঁদের প্রোফাইলে ঢুকলে দেখাচ্ছে—“এই অ্যাকাউন্ট বর্তমানে ভারতে প্রবেশযোগ্য নয়।”
উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতিতে আফ্রিদির মন্তব্য কূটনৈতিক এবং ক্রীড়াঙ্গনে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে। তাঁর আহ্বান, খেলাধুলা যেন আবার শান্তির সেতুবন্ধন হয়ে ওঠে, রাজনীতি কিংবা প্রতিহিংসার হাতিয়ার না হয়।
Leave a comment