প্রতি বছর ১২ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস (World Arthritis Day)। ১৯৯৬ সালে ‘আর্থ্রাইটিস অ্যান্ড রিউম্যাটিজম ইন্টারন্যাশনাল (ARI)’-এর উদ্যোগে দিবসটি প্রথম পালিত হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর এ দিনটি বিশ্বজুড়ে আর্থ্রাইটিস সম্পর্কে সচেতনতা, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা–গবেষণা প্রসারে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হচ্ছে।
২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘স্বপ্নের শক্তি’ (The Power of Dreams)। এই স্লোগানটি মূলত মানুষকে অনুপ্রাণিত করে আর্থ্রাইটিসকে জয় করে স্বাভাবিক ও সক্রিয় জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখতে।
আর্থ্রাইটিস হলো এমন একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে শরীরের জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ, ব্যথা ও জ্বালাপোড়া দেখা দেয়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ধীরে ধীরে নড়াচড়া, হাঁটা বা দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধা অনুভব করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ কোনো না কোনো ধরনের আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। সবচেয়ে সাধারণ ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্টিওআর্থ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং গাউট।
আর্থ্রাইটিস শুধু শারীরিক কষ্টই বাড়ায় না, বরং এটি সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বোঝা সৃষ্টি করে। কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় উৎপাদনশীলতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আর্থ্রাইটিসের সুনির্দিষ্ট কারণ অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারণ করা না গেলেও বয়স, স্থূলতা, বংশগত কারণ, সংক্রমণ, দীর্ঘস্থায়ী চাপ এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। চিকিৎসকরা বলছেন, সুস্থ খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম এ রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করলে অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
বাংলাদেশেও এখন আর্থ্রাইটিস রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কর্মব্যস্ত নগরজীবনে দীর্ঘসময় বসে থাকা, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং অতিরিক্ত ওজন এর অন্যতম কারণ।
বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি—যাতে তারা সময়মতো চিকিৎসা নেয়, রোগের প্রাথমিক লক্ষণ চেনে এবং প্রতিরোধমূলক জীবনধারা অনুসরণ করে।
বিভিন্ন দেশে এ উপলক্ষে স্বাস্থ্যসেমিনার, র্যালি, ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প ও জনসচেতনতা প্রচারণা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে টেলিভিশন টকশো, ওয়েবিনার ও ফ্রি চেকআপ ক্যাম্প আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
আর্থ্রাইটিস শুধু একটি শারীরিক ব্যাধি নয়—এটি মানবজীবনের গতি, স্বপ্ন ও কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। তাই এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘স্বপ্নের শক্তি’ স্মরণ করিয়ে দেয়, সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতার মাধ্যমে এই ব্যাধিকে জয় করা সম্ভব। সচেতনতা, নিয়মিত চিকিৎসা ও ইতিবাচক জীবনযাপনই পারে—একটি ব্যথামুক্ত ও সক্রিয় ভবিষ্যতের পথ খুলে দিতে।
তথ্যসূত্র: WHO, Arthritis and Rheumatism International (ARI), Arthritis Foundation
Leave a comment