আজকের এই দিনে, ১৯০৮ সালের ১০ মে, জন্মগ্রহণ করেন প্রমিলা দেবী — যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তি প্রেম ও দাম্পত্যের গল্প। তিনি ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনসঙ্গিনী, সহচর ও সাহসিকতার প্রতীক। জন্মসূত্রে তাঁর নাম ছিল অচিন্ত্যকুমারী সেনগুপ্ত, তবে বিবাহ পরবর্তী জীবনে পরিচিতি লাভ করেন ‘প্রমিলা নজরুল’ নামে।
প্রমিলা দেবীর জন্ম কলকাতার একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন সুশিক্ষিতা, সাহসিনী ও সংস্কৃতিমনা। তার জীবনের সবচেয়ে আলোচিত অধ্যায় শুরু হয় ১৯২৪ সালে, যখন ধর্ম-বর্ণের সীমা পেরিয়ে প্রমিলা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তৎকালীন সাহিত্যাঙ্গনে ঝড় তোলা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে। এই বিয়ে তৎকালীন সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
প্রমিলা শুধু নজরুলের স্ত্রী ছিলেন না, ছিলেন তাঁর সৃষ্টিশীল জীবনের নীরব অনুপ্রেরণা। নজরুল যখন দারিদ্র্য, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে লড়ছিলেন, প্রমিলা ছিলেন তাঁর পাশে এক অবিচল ছায়ার মতো। তাঁরা চার সন্তানের জননী হন, যদিও জীবনের পরিণতিতে নানা শোক-দুঃখ তাঁদের সংসারে ছায়া ফেলে।
তাঁর জীবনের একটি বড় অধ্যায় জুড়ে রয়েছে সংগ্রাম ও ত্যাগের ইতিহাস। কবি নজরুল যখন অসুস্থ হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন, প্রমিলাই একা হাতে পরিবারের হাল ধরেছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে তিনি সন্তানদের মানুষ করেন, কবির চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
১৯৬২ সালে ৫৪ বছর বয়সে প্রমিলা দেবী মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তাঁর পেছনে রেখে যান এক ইতিহাস, এক আত্মত্যাগের দলিল, এবং নজরুলপ্রেমীদের হৃদয়ে চিরস্মরণীয় এক নাম।
শুধু বিদ্রোহী কবির সহধর্মিণী হিসেবেই নয়, একজন সংগ্রামী নারী, সাহসিনী জীবনসঙ্গিনী ও বাঙালি নারীর প্রতিবাদী মুখ হিসেবে আজও তিনি অনন্য উদাহরণ।
Leave a comment