মুঠোফোনভিত্তিক আর্থিক সেবাপ্রতিষ্ঠান বিকাশ লিমিটেড ২০২৪ সালে ইতিহাস গড়েছে রেকর্ড মুনাফা ও আয় দিয়ে। বছর শেষে বিকাশের আয় পৌঁছেছে ৫ হাজার ৫৮ কোটি টাকায় এবং মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৩১৬ কোটিতে—যা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এ আয় ও মুনাফার তথ্য প্রকাশ পেয়েছে সম্প্রতি প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে, যা ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে।
গত বছর বিকাশের আয় ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়েছে ২১ শতাংশ বা ৮৬৭ কোটি টাকা। একই সময়ে মুনাফা বেড়েছে ২১৭ কোটি টাকা বা ২১৯ শতাংশ। ২০২৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৯৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল, যা ২০২৪ সালে এক লাফে তিন গুণ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথমবারের মতো বিকাশ ৩০০ কোটির ঘর পেরিয়েছে মুনাফায়।
এই আর্থিক সাফল্যের প্রভাবে ব্র্যাক ব্যাংকও রেকর্ড ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার সম্মিলিত মুনাফা করেছে। কারণ, বিকাশের মালিকানার একটি বড় অংশ রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের হাতে।
গত ১০ বছরে বিকাশের আয় বেড়েছে ৯ গুণ এবং মুনাফা বেড়েছে ১৭ গুণ। ২০১৪ সালে বিকাশের আয় ছিল ৫৭৩ কোটি টাকা এবং মুনাফা ছিল ১৯ কোটি টাকা। তখন থেকে ধারাবাহিক অগ্রগতি থাকলেও ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কিছুটা ধাক্কা খায় প্রতিষ্ঠানটি। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি লোকসান করে ১১৭ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২২ সালে ১৮ কোটি ও ২০২৩ সালে ৯৯ কোটি টাকা মুনাফা করে আবার ঘুরে দাঁড়ায়। অবশেষে ২০২৪ সাল ছিল বিকাশের ‘টার্নঅ্যারাউন্ড ইয়ার’।
এই আর্থিক অগ্রগতির বিষয়ে বিকাশের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মঈনুদ্দিন মোহাম্মদ রাহগীর বলেন, “বিকাশের প্রবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গ্রাহকদের ডিজিটাল শিক্ষায় ধারাবাহিক কাজ।” তিনি আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটি ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সেবা অবকাঠামো ও অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণ করে ব্যবসার ভিত্তিকে শক্তিশালী করেছে।
বর্তমানে বিকাশের রয়েছে প্রায় ৮ কোটি গ্রাহক, ৩ লাখ ৩০ হাজার এজেন্ট এবং সাড়ে ৫ লাখ মার্চেন্ট পয়েন্ট। শুধু আর্থিক লেনদেন নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিল পরিশোধ, ক্ষুদ্রঋণ, সঞ্চয় ও অন্যান্য ডিজিটাল আর্থিক সেবা চালু করেছে। এর পেছনে রয়েছে বিশ্বব্যাংকের আইএফসি, গেটস ফাউন্ডেশন, মানি ইন মোশন, সফটব্যাংক এবং অ্যান্ট ইন্টারন্যাশনালের মতো আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সহায়তা।
২০২৪ সালে বিকাশ সরকারের কোষাগারে কর দিয়েছে ১৮৯ কোটি টাকা এবং ব্যাংক থেকে সুদ বাবদ আয় করেছে ১৯০ কোটি টাকা।
সব মিলিয়ে, এক দশকের যাত্রায় ক্ষুদ্র লেনদেনভিত্তিক একটি মোবাইল ফিন্যান্স কোম্পানি থেকে বিকাশ পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ ও লাভজনক ডিজিটাল আর্থিক প্রতিষ্ঠানে।
Leave a comment