প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন হবে গত ১৬ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) ইতালির রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) সদর দপ্তরে বিশ্ব খাদ্য ফোরামের (WFF) এক অনুষ্ঠানের সাইডলাইনে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. ইউনুস বলেন, “এই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য হবে একটি বাস্তব ও ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এটি হবে গত ১৬ বছরে প্রথম সুষ্ঠু নির্বাচন। পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো ছিল ভুয়া ও কারচুপিপূর্ণ।” বৈঠকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা প্রধান উপদেষ্টাকে ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ৩০)-এ অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান।
জবাবে ড. ইউনুস বলেন, “২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আমি ব্যস্ত থাকব। তাই সম্ভবত কপ৩০ সম্মেলনে অংশ নেওয়া সম্ভব হবে না।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে দেশের জনগণ তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরে পায়।
বৈঠকে ড. ইউনুস এবং প্রেসিডেন্ট লুলা দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা, ও সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগ বৃদ্ধির বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে সহযোগিতার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষত কৃষি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং সামাজিক ব্যবসার ক্ষেত্রে।” তিনি প্রেসিডেন্ট লুলাকে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
জবাবে প্রেসিডেন্ট লুলা আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বলেন,“আমি ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ সফরে আসার চেষ্টা করব। এই সফর আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করবে।”
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জানান, তাঁর দেশ বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসা মডেল থেকে শিখতে আগ্রহী। তিনি বলেন, “ব্রাজিল সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত। একইসঙ্গে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী সামাজিক ব্যবসার অভিজ্ঞতা আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে।”
এর উত্তরে ড. ইউনুস বলেন, “এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ হবে। দুই দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।” বৈঠকের এক পর্যায়ে দুই নেতা ফুটবল প্রসঙ্গেও আলাপ করেন।
অধ্যাপক ইউনুস বলেন, “বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই ব্রাজিল সমর্থক রয়েছে। ফুটবল আমাদের দু’দেশের মানুষের মাঝে অদ্ভুত এক বন্ধন তৈরি করেছে।”
অধ্যাপক ইউনুসের এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ১৬ বছর পর একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি দেশে গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারের আশা জাগিয়েছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের প্রতি আস্থার বার্তা দেবে এবং বিনিয়োগ ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে ভূমিকা রাখবে।
Leave a comment