১৯৭২ সালের ২৬ এপ্রিল ছিল বাংলাদেশের কূটনৈতিক অগ্রযাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়া, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমতা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। এটি ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পথে আরেকটি মাইলফলক।
১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পরপরই দেশের স্বাধীনতা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার লড়াই শুরু হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় লাইবেরিয়াও নতুন রাষ্ট্রটির পাশে দাঁড়ায়।
লাইবেরিয়ার এই স্বীকৃতি শুধুমাত্র কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, বরং তা ছিল এক গর্বিত আফ্রিকান জাতির পক্ষ থেকে মুক্তিকামী আরেক জাতির সংগ্রামের প্রতি সম্মান। এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আফ্রিকার অনেক দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ভিত্তি পায়।
লাইবেরিয়ার এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তোলে এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য বহুপাক্ষিক সংস্থায় সদস্যপদ পাওয়ার পথ প্রশস্ত করে। ১৯৭২ সালের এপ্রিলে যখন বাংলাদেশ এখনও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য লড়ছে, তখন লাইবেরিয়ার মতো একটি দেশের অকুন্ঠ সমর্থন নবজাত রাষ্ট্রটির কূটনৈতিক সাহস বাড়িয়ে দেয়।
এই দিনটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয়, কারণ এটি দেখিয়ে দেয় বিশ্বপরিমণ্ডলে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন কিভাবে ধীরে ধীরে বিস্তৃত হয়েছে। লাইবেরিয়ার এই বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান ভবিষ্যতেও দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
Leave a comment