মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় মেঘনা নদী থেকে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। নিহত যুবকের পরিবার দাবি করেছে, বন্ধুদের সঙ্গে বের হওয়ার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন এবং পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত বন্ধুদের মোবাইল ফোন বন্ধ এবং তারা পলাতক থাকায় রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে গজারিয়া উপজেলার কাজীপুরা এলাকায় মেঘনা নদী থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরে পরিচয় শনাক্ত হলে জানা যায়, নিহত যুবকের নাম উমায়ের হাসান (২৫)। তিনি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার চর কিশোরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা এবং মুক্তার গাজীর ছেলে।
গজারিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্থানীয়রা মেঘনা নদীতে একটি মরদেহ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে নৌ
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুপুর দুইটার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে শরীরে কোনো চিহ্ন না পাওয়া গেলেও মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের পরিবার জানায়, গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে উমায়ের হাসান স্বাভাবিকভাবেই রাতের খাবার খেয়ে নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েন। দিবাগত রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে তার দুই বন্ধু—সোহাগ ও বায়েজিদ—মোবাইল ফোনে তাকে বাইরে ডেকে নেন। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই সময় উমায়ের বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আর ফিরে আসেননি।
নিহতের মা আনার কলি অভিযোগ করে বলেন, “আমার ছেলে কোনো শত্রুতা বা ঝামেলায় জড়িত ছিল না। গভীর রাতে তার বন্ধুরাই ফোন করে ডেকে নেয়। এরপর থেকে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, ওই দুই বন্ধুর মোবাইল নম্বরও বন্ধ এবং তারা আত্মগোপনে রয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তারাই আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।”
তিনি আরও জানান, ছেলের কোনো খোঁজ না পেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। কিন্তু তিন দিন পার হলেও কোনো সন্ধান না মেলায় পরিবারের উদ্বেগ বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে মেঘনা নদীতে মরদেহ উদ্ধারের খবরে তারা ঘটনাস্থলে এসে পরিচয় শনাক্ত করেন।
গজারিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শরজিৎ কুমার ঘোষ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “দুপুর দুইটার দিকে আমরা মরদেহ উদ্ধার করি এবং আড়াইটার দিকে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়। প্রাথমিকভাবে এটি অপমৃত্যু না হত্যাকাণ্ড—তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।”
তিনি আরও বলেন, নিহতের পরিবারের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হবে। তদন্তের স্বার্থে সম্ভাব্য সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং অভিযুক্তদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
Leave a comment