বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় নেশার টাকার জন্য মোটরসাইকেল চুরি করতে গিয়ে নিজ মামাতো বোন ও ভাগনেকে নির্মমভাবে হত্যা করে জিসান ও তার সহযোগীরা। তিন আসামিকে গ্রেফতারের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) ও মিডিয়া মুখপাত্র আতোয়ার রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুল্লাপুর বটতলা গ্রামে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই রাতে প্রবাসীর স্ত্রী রাণী বেগম (৪০) ও তার ছেলে ইমরান হোসেনকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
পুলিশ জানায়, হত্যার পর ইমরানের মোটরসাইকেল ও কিছু স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহত রাণী বেগমের মা শিবগঞ্জ থানায় মামলা করেন, যেখানে প্রধান আসামি হিসেবে নাম আসে রাণী বেগমের ফুফাত ভাই জিসানের। পুলিশের তদন্তে উঠে আসে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার তিন যুবকের নাম—জিসান, মাহী ইসলাম ও মো. সৈকত। তারা হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পলাতক ছিল।
১৫ অক্টোবর রাতে ঢাকার আশুলিয়ার পূর্ব নরসিংহপুর এলাকা থেকে মাহী ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর খিলক্ষেতের ডুমনি বাজার থেকে গ্রেফতার করা হয় জিসান ও সৈকতকে।
তিনজনের বাড়িই জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলায়। গ্রেফতারের পর আদালতের নির্দেশে তাদের চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশকে তারা জানায়, নেশার কারণে তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ধার করা টাকার চাপ থেকে মুক্তি পেতে তারা মোটরসাইকেল ও স্বর্ণালংকার লুটের পরিকল্পনা করে।
বগুড়ার এএসপি আতোয়ার রহমান বলেন, “জিসান নিজের মামাতো বোন রাণী বেগমের বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। উদ্দেশ্য ছিল ভাগনে ইমরানের মোটরসাইকেলটি কৌশলে নিয়ে আসা। কিন্তু ইমরান বিষয়টি টের পেয়ে গেলে তারা তাকে দা দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে জখম করে। ”
তিনি আরও বলেন, “ছেলেকে বাঁচাতে রাণী বেগম এগিয়ে এলে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করে তারা। এরপর মোটরসাইকেল ও কিছু গহনা নিয়ে পালিয়ে যায়।”
পুলিশ জানায়, পরে আসামিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নওগাঁ সদর এলাকা থেকে লুট হওয়া মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। তদন্তকারীরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডটি ছিল পরিকল্পিত, এবং আর্থিক সংকট ও মাদকাসক্তিই ছিল এর মূল কারণ। নিহত রাণী বেগমের মা বলেন,“আমি ভাবতেও পারিনি আমার মেয়ের ফুফাত ভাই এমন কাজ করতে পারে। এখন আমার মেয়ে আর নাতি দুজনেই চলে গেল।”
বগুড়ার পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ তদন্ত টিম কাজ করছে। আদালতে জবানবন্দি রেকর্ডের পর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলের প্রস্তুতি চলছে।মা-ছেলেকে হত্যার এক মাস পর পুলিশি তদন্তে এই ঘটনার জট খুলেছে। নেশার অভ্যাস যে কেবল একজন ব্যক্তির জীবন নয়, গোটা পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে দিতে পারে—বগুড়ার এই হত্যাকাণ্ড যেন তারই মর্মন্তুদ স্মারক।
Leave a comment