বাংলাদেশে ধর্ষণসংক্রান্ত মামলার একটি বড় অংশ তদন্ত পর্যায়েই প্রমাণিত হচ্ছে না। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানিয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তদন্ত করা ১১ হাজারের বেশি মামলার মধ্যে ৪৪ শতাংশেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাব, বাদীর অনীহা কিংবা আসামি শনাক্ত করতে না পারা—এসব কারণে বেশির ভাগ মামলা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, রাজধানীর নিম্নবিত্ত এলাকার এক শিশুকে প্রতিবেশী ধর্ষণ করলেও মামলার তদন্ত পর্যায়ে শিশুটির বাবা সামাজিক লজ্জার ভয় দেখিয়ে মামলা চালাতে অস্বীকৃতি জানান। বারবার তলব করেও তিনি হাজির না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। আবার চলতি বছরের জুনে পল্লবীতে বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হলেও বাদী পরে স্বীকার করেন, এটি ছিল ভুয়া মামলা। তদন্তে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে সে মামলা ‘ফাইনাল রিপোর্ট–ফলস’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. মোস্তফা কামাল বলেন, সব অপ্রমাণিত মামলা ভুয়া নয়। অন্তত ৩০ শতাংশ মামলা সত্য হলেও সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। অপর দিকে ভুয়া মামলা শনাক্ত করা গেলে নির্দোষ মানুষ হয়রানি থেকে রক্ষা পান।
সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যায়, থানায় দায়ের করা মামলার ৪২ শতাংশ এবং আদালতের নির্দেশে করা মামলার ৪১ শতাংশ তদন্তে অপ্রমাণিত হয়েছে। তবে অপ্রমাণিত মামলার মধ্যেও একাংশ পরে আদালতের নির্দেশে নতুন করে তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। যেমন রাজশাহীর একটি ঘটনায় পুলিশ প্রথমে আত্মহত্যার প্রতিবেদন দিলেও পিবিআই তদন্তে ধর্ষণ ও হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক দীপ্তি শিকদার মনে করেন, স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপ, সাক্ষী সুরক্ষার অভাব এবং মামলা দীর্ঘসূত্রতার কারণে বাদীরা আপস করতে বাধ্য হন। দেরিতে মেডিকেল পরীক্ষার কারণে অনেক মামলাই দুর্বল হয়ে পড়ে। তাঁর মতে, তদন্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও প্রমাণ সংগ্রহের সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ জরুরি।
পিবিআইয়ের এই প্রতিবেদন ধর্ষণ মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং সামাজিক চাপের বাস্তবতাকে নতুন করে সামনে এনেছে।

Leave a comment