পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ শনিবার দুপুরে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ সংস্থা ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (এনসিএ)-র কোনো জরুরি বৈঠক হয়নি এবং এমন কোনো বৈঠকের সময়সূচিও নির্ধারিত ছিল না।
দেশটির টেলিভিশন চ্যানেল এআরওয়াই নিউজ-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির কোনো বৈঠক হয়নি, এবং এমন কোনো পরিকল্পনাও ছিল না।” এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আলোচিত বৈঠকের গুজব খণ্ডন করলেন তিনি।
এর আগে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে দাবি করে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের আহ্বানে এনসিএ-র জরুরি বৈঠক বসতে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে নাম প্রকাশ না করা সামরিক সূত্রের বরাতে এই তথ্য দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের মাটিতে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর থেকেই দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। জবাবে আজ ভোরে পাকিস্তান ভারতের পাঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে পাল্টা সামরিক হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানিয়েছেন, এই অভিযানে ভারতের ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণাগার, পাঠানকোট ও উধমপুর বিমানঘাঁটিতে আঘাত হানা হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ড্রোন হামলার কথাও বলা হয়।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পক্ষ থেকেও ইসলামাবাদের উপকণ্ঠের শোরকোট ও নুর খান ঘাঁটিসহ কয়েকটি স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করা হয়েছে। জম্মু ও শ্রীনগরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয়।
এরই মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সঙ্গে পৃথক ফোনালাপে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ পুনরায় চালু করার ওপর গুরুত্ব দেন, যাতে ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো যায়।
এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিবৃতি কূটনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এতে বোঝা যাচ্ছে, দেশটি এখনো পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে ‘কঠোর সংযম’ নীতি অনুসরণ করছে।
পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমাদের হামলার লক্ষ্য বেসামরিক স্থাপনা নয়। আমরা কেবল সেসব ঘাঁটিতে আঘাত করেছি, যেখান থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানো হয়েছিল।”
উল্লেখ্য, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে এমন বিপজ্জনক উত্তেজনা সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালের বালাকোট অভিযানের সময়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা আরও বেশি, কারণ এটি দু’দেশকে পরমাণু যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে বলে সতর্ক করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
Leave a comment