কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ভারত হয়তো সীমান্তে হামলা চালাতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন—এই উত্তেজনা যুদ্ধের রূপ নিলে চীন কী ভূমিকা নেবে?
চীন এবং পাকিস্তানের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে গভীর ও বহুমাত্রিক। শুধু প্রতিরক্ষা নয়, অর্থনীতি ও কূটনীতিতেও এই দুই দেশের পারস্পরিক নির্ভরতা সুদৃঢ়। পেহেলগাম হামলার পরপরই চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে কথা বলেন এবং দুই পক্ষকেই সংযত থাকতে আহ্বান জানান। একই সঙ্গে চীন হামলার নিরপেক্ষ তদন্তের পক্ষেও সওয়াল করে।
চীনের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা চীনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বেইজিং মনে করে, ভারত-পাকিস্তান কোনো সংঘাতেই তাদের স্বার্থ নেই। তবে চীন কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানের পাশে থেকেছে এবং ২০১৯ সালের মতো এবারও আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানের অবস্থানকে খানিকটা হলেও স্থিতিশীল করেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুদ্ধ শুরু হলে চীন সরাসরি কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ করবে না। তবে পাকিস্তানকে কৌশলগত সহায়তা দেবে, বিশেষত তথ্য আদান-প্রদান, গোয়েন্দা নজরদারি এবং প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে। কায়েদ-এ-আজম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মুহম্মদ শোয়েবের মতে, পাকিস্তানের কৃত্রিম উপগ্রহ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র সিস্টেমের একটি বড় অংশই চীনের ওপর নির্ভরশীল। বাইডু স্যাটেলাইট ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত সুবিধাও পাকিস্তানকে দিয়েছে চীন।
এছাড়া গত পাঁচ বছরে পাকিস্তানের আমদানিকৃত অস্ত্রের ৮১ শতাংশই এসেছে চীন থেকে। এসবের মধ্যে রয়েছে PL-15 ও SD-10 নামক অত্যাধুনিক বিভিআর (দৃশ্যপটের বাইরে আঘাত হানতে সক্ষম) মিসাইল, যা ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের মূল অস্ত্রভাণ্ডারে থাকবে।
বিশ্লেষক আইনার ট্যাঙ্গেন বলেন, এই মুহূর্তে চীন যুদ্ধের পক্ষে কোনো অবস্থান নেবে না, বিশেষ করে তারা যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জর্জরিত এবং ভারত তাদের একটি বড় ব্যবসায়িক অংশীদার। তবে যদি পরিস্থিতি চরমে পৌঁছায়, চীন কূটনৈতিক চাপ এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার মাধ্যমে পাকিস্তানকে নীরবে সহায়তা করবে।
সবমিলিয়ে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হলে চীন সরাসরি রণক্ষেত্রে অংশ নেবে না, তবে রাজনৈতিক, কৌশলগত এবং প্রযুক্তিগত সহায়তায় পাকিস্তানের এক অনড় মিত্র হিসেবে রয়ে যাবে। আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখা চীনের নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্যও জরুরি। তাই প্রকাশ্যে না এলেও, চীন নেপথ্য থেকেই এ সংঘাতে প্রভাব রাখবে—এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
Leave a comment