নোয়াখালী কারাগারে বন্দি থেকেও সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী যেন রাজপ্রাসাদে বসবাস করছেন। কারাগারের জরাজীর্ণ পরিবেশ এড়িয়ে নিজের রুমে বসিয়েছেন টাইলস, লাগিয়েছেন এসি। নিয়মিত বাইরে থেকে আসছে খাবার, রাতদিন অবাধে সাক্ষাৎ করছেন তাঁর অনুসারীরা। শুধু তাই নয়, ঈদে কয়েদি ও বন্দিদের প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে দিয়েছেন এবং দু’টি বিশাল গরু জবাই করে সবার জন্য ভোজের আয়োজন করেছেন।
কারারক্ষী থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তাঁর প্রভাবের বাইরে নন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ন্ত্রণ এতটাই দৃঢ় যে, একবার তাঁকে কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই ফেরত আসেন নোয়াখালীতে। কারাগারের জেলার দাবি, টাইলস বসিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ, তবে এসির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। অন্যদিকে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের মাধ্যমে কোনো কাজ হয়নি।
২০০৮ থেকে টানা চারবার নির্বাচিত এমপি একরামুল করিম চৌধুরী দীর্ঘ সময় নোয়াখালীতে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করেছেন। কিশোর গ্যাং, দলীয় বলয়, টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি—এসব অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে বহুবার উঠেছে। স্ত্রী শিউলী একরাম কবিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পুত্র সাবাব সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাগ্নে জহিরুল হক রায়হান কবিরহাট পৌরসভার মেয়র—এভাবে পরিবারের সদস্যদেরও নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছেন তিনি।
কিন্তু কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে পালিয়ে যান একরাম। পরে র্যাব তাঁকে চট্টগ্রামের খুলশি থেকে গ্রেপ্তার করে নোয়াখালী কারাগারে পাঠায়। সেখানেও ভিআইপি মর্যাদায় তাঁকে আদালতে নেয়া হচ্ছিল, হাতকড়া ছাড়া। ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদের পর পরিবর্তন আসে।
কারাগারের ভেতরের বাস্তবতা নিয়েও নানা গুঞ্জন চলছে। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পাওয়া এক বন্দি জানিয়েছেন, একরামের রুম যেন কারাগারে ‘স্বর্গের খানাখন্দ’। তাঁর কাছে যেকোনো বন্দি হাজির হলে টাকা-পয়সা ও নানা সুবিধা পান। ফলে কার্যত নোয়াখালী কারাগার এখনো তাঁর নিয়ন্ত্রণেই চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

Leave a comment