দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল আজকের এই দিনে, ১০ মে ১৯৯৪। বর্ণবৈষম্যের শৃঙ্খল ছিঁড়ে দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন নেলসন ম্যান্ডেলা — সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও শান্তির প্রতীক এই মহান নেতা।
প্রিটোরিয়ার ইউনিয়ন বিল্ডিং প্রাঙ্গণে এক জাঁকজমকপূর্ণ অথচ আবেগঘন অনুষ্ঠানে ম্যান্ডেলা রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের শতাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, কূটনীতিক এবং লাখো সাধারণ মানুষ — যারা এক অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হন। ম্যান্ডেলার শান্ত কণ্ঠে উচ্চারিত শপথ ছিল বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয়ের ঘোষণাস্বরূপ।
দীর্ঘ ২৭ বছরের কারাবাস শেষে ম্যান্ডেলা যেভাবে শত্রুতা নয়, বরং ক্ষমা ও পুনর্মিলনের পথে জাতিকে এগিয়ে নিয়েছেন, তা বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে বিরল। আফ্রিকার মাটি থেকে উঠে আসা এই নেতা তাঁর ভাষণে বলেন,
“আজ আমরা কেবল একটি সরকার পরিবর্তন করছি না, আমরা একটি নতুন যুগের সূচনা করছি — যেখানে প্রতিটি নাগরিক সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে বাঁচবে।”
১৯৯৪ সালের এই নির্বাচনে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (ANC) নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে এবং দীর্ঘ দিনের শ্বেতাঙ্গ শাসনের অবসান ঘটায়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যেখানে বর্ণ, গোত্র বা ভাষার ভেদাভেদে নয়, বরং ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে সরকার পরিচালিত হবে।
বিশ্বজুড়ে নেতারা ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে গঠিত নতুন সরকারের প্রশংসা করেন এবং এটিকে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক রূপান্তরের এক আদর্শ উদাহরণ হিসেবে আখ্যা দেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও পাঠানো হয় অভিনন্দন বার্তা, যেখানে ম্যান্ডেলাকে ‘মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বাতিঘর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
১০ মে ১৯৯৪ — এই দিনটি তাই কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্যই ছিল আশার এক নতুন আলো। বর্ণবাদ থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের এই মাহেন্দ্রক্ষণ আজও বিশ্বের নানা প্রান্তের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামের অনুপ্রেরণায় জ্বলে।
Leave a comment