Home আন্তর্জাতিক নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাদের খোলাচিঠি, চাপ বাড়ছে
আন্তর্জাতিক

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি সেনাদের খোলাচিঠি, চাপ বাড়ছে

Share
Share

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি অভিযান থামার কোনো লক্ষণ না থাকলেও এবার যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ইসরায়েলেরই সেনারা। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রায় সব শাখার সংরক্ষিত ও অবসরপ্রাপ্ত সেনারা একের পর এক খোলাচিঠিতে সরকারের কাছে যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, হামাসের হাতে থাকা ৫৯ জন জিম্মিকে উদ্ধারের জন্য যুদ্ধের বদলে এখন দরকার শান্তিপূর্ণ সমঝোতা।

এই উদ্যোগের নেতৃত্বে রয়েছেন ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান ড্যানি ইয়াতম। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘নেতানিয়াহু নিজের ক্ষমতা রক্ষা নিয়ে যতটা ভাবছেন, জিম্মিদের জীবন নিয়ে ততটা ভাবছেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি এই আন্দোলনে নেমেছি রাজনৈতিক কারণে নয়, বরং জাতীয় স্বার্থে।’

চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে প্রথম খোলাচিঠিটি পাঠানো হয়, যাতে সই করেন বিমানবাহিনীর এক হাজার সদস্য। এরপর একে একে বিভিন্ন শাখার সেনা সদস্য, এমনকি গোপন সংস্থার লোকজনও চিঠিতে সই করেন। এখন পর্যন্ত সইকারীর সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। তাঁদের অনেকে আবার ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন।

চিঠিগুলোতে সেনারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, চলমান যুদ্ধ ইসরায়েলের লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করছে না বরং জিম্মিদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাঁরা আরও বলেছেন, ‘প্রতিটি নতুন দিন জিম্মিদের জীবনে নতুন ঝুঁকি ডেকে আনছে।’ এই সেনারা এখন নিজেদের সহকর্মী এবং সাধারণ নাগরিকদেরও আহ্বান জানাচ্ছেন প্রতিবাদে শামিল হতে।

ইসরায়েলের সামরিক ইতিহাসে এমন ব্যাপক সেনা-বিরোধী উদ্যোগ অত্যন্ত বিরল। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ১৯৮২ সালের লেবানন যুদ্ধের পর এমন সেনা-সংকট আর দেখা যায়নি। অনেক সংরক্ষিত সেনা নেতানিয়াহুর ডাকে আর সাড়া দিচ্ছেন না, ফলে সেনাবাহিনীর ওপর চাপ বাড়ছে। বর্তমানে সংরক্ষিত সেনার সক্রিয়তা ৫০-৬০ শতাংশে নেমে গেছে বলে জানা গেছে।

ইয়োভ (ছদ্মনাম) নামে একজন পদাতিক সেনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতাম, আমি কিছু ভালো কাজ করছি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমরা ভুল পথে হাঁটছি। এটা হামাসকে পরাজিত করার যুদ্ধ নয়, এটা নিজেদের দেশকে হারানোর যুদ্ধ।’

ইসরায়েলের সমালোচকেরা বলছেন, যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, তত বেশি প্রশ্ন উঠছে দেশটির সেনাবাহিনীর ‘নৈতিকতা’ নিয়ে। হারেৎজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক কলামে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আমিরাম লেভিন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের ঝুঁকি এবং সামাজিক মূল্যবোধের ওপর আঘাতের মুখে সেনাদের আদেশ অমান্য করার বিষয়টি এখন বিবেচনায় নেওয়ার সময় এসেছে।’

নেতানিয়াহু অবশ্য এসব সমালোচনার জবাবে কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এগুলো মিথ্যাচার ও অপপ্রচার ছড়ানো কিছু পেনশনভোগী গোষ্ঠীর কাজ, যাঁরা দীর্ঘদিন সেনাবাহিনীতে নেই।’ তবে জনমত জরিপ বলছে ভিন্ন কথা। বেশির ভাগ ইসরায়েলি এখন যুদ্ধের চেয়ে জিম্মিদের মুক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে চান।

তেল আবিবে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এই খোলাচিঠিগুলোর প্রভাবে। বিক্ষোভকারীরা এবার শুধু জিম্মিদের নয়, গাজায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের ছবিও নিয়ে আসছেন পথে। ফলে শুধু যুদ্ধের নয়, মানবিকতার প্রশ্নেও ইসরায়েলি সমাজ আজ গভীর দ্বিধাবিভক্ত।

এই পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ওপর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, নাগরিক সমাজ—সব দিক থেকেই আসা এই চাপ সামাল দেওয়া তাঁর জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

আমেরিকান জিম্মিকে মুক্তির ঘোষণা দিয়েছে হামাস।

যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাধানে কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা এগিয়ে নিতে স্বাধীনতাকামী শাসক দল হামাস ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে । শান্তি চুক্তিতে...

আওয়ামী লীগের সম্পদ বাজেয়াপ্তের সম্ভাবনা

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত বিধান অনুসারে আওয়ামী লীগের সম্পদ বাজেয়াপ্তের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের...

Related Articles

মিয়ানমারে স্কুলে জান্তা হামলা, শিশুসহ নিহত হয়েছে ২২ জন

সামরিক জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় মিয়ানমারের একটি স্কুলে ২০ জন শিশু ও...

জাতিসংঘের সতর্কবার্তা, দুর্ভিক্ষের চূড়ান্ত সীমায় গাজা

ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা । জাতিসংঘ-সমর্থিত এক প্রতিবেদনে জানানো...

সন্তানকে উদ্দেশ্য করে ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের হৃদয়বিদারক চিঠি

পৃথিবীতে এসেছে প্রথম সন্তান, কিন্তু সদ্যোজাত সন্তানকে কোলে নেওয়ার সৌভাগ্য হয়নি মাহমুদ...