নারী সংস্কার কমিশন নিয়ে চলমান বিতর্কে গালাগাল ও অশালীন ভাষার ব্যবহার যুক্তিনির্ভর আলোচনা ও নৈতিক বিতর্কের সুযোগ নষ্ট করছে বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, এই ধরনের কটু ভাষা সমাজের পশ্চাৎপদ মানসিকতার প্রতিফলন, যা উভয় পক্ষের ক্ষতিই ডেকে আনছে।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘নারীর ন্যায্যতা ও নারী সংস্কার কমিশন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন ফরহাদ মজহার। সভার আয়োজন করে সামাজিক সংগঠন ‘গণশক্তি সভা’।
ফরহাদ মজহার বলেন, নারী সংস্কার কমিশন নিয়ে আলোচনা যখন যুক্তি ও নীতিনির্ভর পথে এগোনোর কথা ছিল, তখন তা কিছু আলেমের কটূক্তি ও গালাগালের কারণে বিপথে গেছে। এই প্রবণতা সমাজে একটি গভীর দুর্বলতা ও অযোগ্যতার ইঙ্গিত দেয়, যেখানে কথার জোরে যুক্তিকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়।
তিনি যৌনকর্মকে শ্রম হিসেবে স্বীকৃতির পেছনের বাস্তবতা ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বোঝার আহ্বান জানিয়ে বলেন, একজন নারী কেন পতিতাবৃত্তিতে জড়ান, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। এ ক্ষেত্রে সমাজ, আলেম ও ধর্মীয় নেতাদের দায়িত্বের জায়গা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কোনো মেয়ে স্বেচ্ছায় পতিতাবৃত্তি বেছে নেয় না। দারিদ্র্য ও সুযোগহীনতাই তাদের সেই পথে ঠেলে দেয়। প্রশ্ন হলো—সমাজ তার পুনর্বাসনে কী করেছে?’
তিনি বলেন, এই সমস্যার সমাধান কেবল আইন দিয়ে নয়, বরং আধ্যাত্মিক শিক্ষা ও সামাজিক সহানুভূতির মাধ্যমে হওয়া উচিত। কারণ যৌনতা ও অর্থনীতি সমাজে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বাস্তবতা।
নারী সংস্কার কমিশনের গঠন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফরহাদ মজহার। তাঁর মতে, এই কমিশন সমাজের প্রতিনিধি নয় এবং এর কাঠামো এমনভাবে গড়া হয়নি, যাতে সকল শ্রেণি ও মতের মানুষ এর সঙ্গে সংলাপে যুক্ত হতে পারে। ফলে সমালোচক ও পক্ষে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে দূরত্ব আরও বেড়েছে।
ইসলামে নারীর অধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসলাম বহু আগেই নারীর কর্তা-সত্তা স্বীকৃত করেছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে আলেমরা ইসলামের মূল ব্যাখ্যা না দেওয়ায় নারীবাদী আন্দোলনের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। অথচ নারীবাদীরা যেসব অধিকারের কথা বলেন, সেগুলোর অনেক কিছুই ইসলামে পূর্বেই ছিল।
তিনি বলেন, সমাজে নারী-পুরুষের সম্পর্ক কেবল যৌনতা নয়, বরং এটি প্রজাতি পুনরুৎপাদন ও পারিবারিক কাঠামোর ভিত্তিতে গঠিত। এই জৈবিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতা মাথায় রেখে গঠনমূলক আলোচনার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি আইয়ুব ভূঁইয়া। আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক শামিমা তাসনিম।
Leave a comment