তারুণ্য ধরে রাখা, বয়সের ছাপ প্রতিহত করা কিংবা শরীরকে ভিতর থেকে সতেজ রাখা—এমন সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের আকাঙ্ক্ষা আজকাল খুব সাধারণ। আর এই চাহিদার মাঝেই আলোচনায় উঠে এসেছে একটি তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত উপাদান—ভিটামিন পি। নামটা শুনেই প্রশ্ন জাগে—আদৌ কি এটি কোনো ভিটামিন? কিংবা, কোথায় পাওয়া যায় এই উপাদানটি?
আসলে ‘ভিটামিন পি’ বলতে বোঝানো হয় একধরনের উদ্ভিজ্জ জৈবরাসায়নিক উপাদানকে, যাদের বৈজ্ঞানিক নাম ফ্লাভোনয়েড। স্কয়ার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন জানান, ১৯৩০-এর দশকে এই ফ্লাভোনয়েডগুলো আবিষ্কারের সময় এগুলোকে ভিটামিন মনে করে ‘পি’ নামকরণ করা হয়। যদিও পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীরা একে ভিটামিন শ্রেণিতে না রেখে আলাদা পুষ্টি উপাদান হিসেবে গণ্য করেছেন, তবে এর স্বাস্থ্যগুণ কোনো অংশেই কম নয়।
ফ্লাভোনয়েড বা ‘ভিটামিন পি’ কাজ করে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে। অর্থাৎ, এটি শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল দমন করে কোষের ক্ষয়রোধ করে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে যে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয়, তা মোকাবিলায় এই উপাদানটি সহায়ক। এর ফলে ত্বক হয় উজ্জ্বল, বয়সের ছাপ পড়ে ধীরে, আর সার্বিকভাবে দেহ থাকে সতেজ।
কেবল তারুণ্য ধরে রাখাই নয়, গবেষণা বলছে, নিয়মিত ফ্লাভোনয়েডযুক্ত খাবার খেলে হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং এমনকি স্ট্রোকের ঝুঁকিও হ্রাস পায়। এ ছাড়াও এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
এই উপকারি উপাদানটি পাওয়া যায় খুব সাধারণ কিছু খাদ্যদ্রব্যে—যেমন রঙিন ফল ও সবজি, বিশেষ করে বেরি জাতীয় ফল, আঙুর, কমলালেবু ও তার খোসা, টমেটো, কাঁচা মরিচ, ব্রকলি, পুদিনাপাতা, গ্রিন টি, জলপাই তেল ও সয়া। এ ধরনের খাবারগুলোতে থাকা ফ্লাভোনয়েড দেহে সহজে শোষিত হয়ে তার কার্যকারিতা দেখাতে পারে।
তবে এখনো চলছে গবেষণা—এই উপাদান দেহে কীভাবে কাজ করে, কতটা শোষিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত কতটা কার্যকর, তা সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করা যায়নি। তবুও চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা মনে করেন, খাদ্যাভ্যাসে ফ্লাভোনয়েডসমৃদ্ধ উপাদান রাখলে শরীর ও ত্বকের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া সম্ভব।
সুতরাং যারা প্রকৃত সৌন্দর্য ও সুস্থতার পথে হাঁটতে চান, তাদের জন্য ‘ভিটামিন পি’ হতে পারে এক অব্যর্থ সঙ্গী। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটি আর যাই হোক, রূপ ও স্বাস্থ্য চর্চায় এর গুরুত্ব আজ অনস্বীকার্য। বয়সকে হার মানাতে চাইলে হয়তো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকাতেই লুকিয়ে আছে সমাধান—রঙিন, স্বাস্থ্যকর খাবারের রঙে লুকিয়ে থাকা সেই রহস্যময় ‘ভিটামিন পি’।
Leave a comment