Home আন্তর্জাতিক ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে উত্তপ্ত যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক
আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে উত্তপ্ত যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক

Share
Share

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের মাধ্যমে তিনি চীনের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন। বর্তমানে চীনা পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রে ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হচ্ছে। এতে মার্কিন বাজারে পণ্যমূল্য হু হু করে বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বহুদিন ধরেই বাণিজ্যিক উত্তেজনা বিরাজমান। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, চীন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করছে, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর বাজারে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরি করছে।

এই যুদ্ধের পেছনে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও রয়েছে। ১৯৭২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের চীন সফরের মধ্য দিয়ে যে সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল, তা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জটিল রূপ নিয়েছে। ২০০১ সালে চীনকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আশা করেছিল চীনে গণতান্ত্রিক এবং নিয়মভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে, কিন্তু বাস্তবতা হয়েছে ভিন্ন।

চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই নেতার মধ্যে বাণিজ্যিক সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ। চীন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা এই বাণিজ্যযুদ্ধের শেষ দেখতে প্রস্তুত। এরই মধ্যে তারা প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ ভোক্তাদের জন্য সামনে আরও দুর্ভোগ আসতে চলেছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পণ্য সরবরাহকারী দেশ। স্মার্টফোন, কম্পিউটার, খেলনার মতো দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। চীন চাইলে ‘রেয়ার আর্থ’ খনিজের রপ্তানি বন্ধ করে মার্কিন প্রযুক্তি খাতকে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে।

এই যুদ্ধ শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে নয়, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিকেও বিপর্যস্ত করতে পারে। মার্কিন কোম্পানি অ্যাপেলসহ অনেক প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদন চেইন পুনর্বিন্যাস করতে হতে পারে, যা সময় ও অর্থ—দুটোরই অপচয় ঘটাবে।

সাবেক হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা অ্যালেক্স জ্যাকেজের মতে, এই বাণিজ্য যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রে জিডিপি হ্রাস, শ্রমবাজার সংকোচন এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই পুরো কৌশলের পেছনে কোনো সুসংহত পরিকল্পনা বা দিকনির্দেশনার অভাব রয়েছে।

সব মিলিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এই সংঘাতে আসলে কে জয়ী হবে? চীনের হাতে বেশ কিছু কৌশলগত অস্ত্র থাকলেও, এই যুদ্ধ দুই পক্ষেরই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে চীন যে এই যুদ্ধের জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে, তার ইঙ্গিত এখন স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা পেলে জিম্মিদের দ্রুত রেহাই দেবে হামাস

গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা পেলে শিগগিরই ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ১৪ এপ্রিল (সোমবার ) হামাস গোষ্ঠীর এক জ্যেষ্ঠ নেতা...

জবিতে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয়েছে বৈশাখী মেলা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন করেছে । রঙিন সাজসজ্জা, শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মুখর হয়ে...

Related Articles

রানি এলিজাবেথ কেন এড়িয়ে চলতেন ইসরায়েলিদের

  ব্রিটেনের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ কখনোই ইসরায়েলকে পছন্দ করতেন না—এমনটাই দাবি...

গাজায় এক মাসে ৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত

  ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত এক মাসে ইসরায়েলি হামলায় নতুন করে প্রায়...

গাজা পরিদর্শন শেষে যে হুমকি দিলেন নেতানিয়াহু

প্রায় ১৮ মাস ধরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলছে ইসরায়েলি আগ্রাসন। এর জেরে বিশ্বজুড়ে...

ট্রাম্প প্রশাসন সব কিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে: বাইডেন

শুল্ক আরোপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি...