পাকিস্তান সরকার ২০২৬ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সামরিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনায় ট্রাম্পের ভূমিকা এবং তার কৌশলগত উদ্যোগকে স্বীকৃতি দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তান সরকারের তরফ থেকে এক্স (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের ‘বিনা উসকানির আগ্রাসন’ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান তার আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করেছে এবং সীমিত সামরিক অভিযানের মাধ্যমে একটি নিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ বাড়তে থাকলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওয়াশিংটন থেকে ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করেন, যা পরিস্থিতি শান্ত করতে সহায়ক হয়েছে।
পাকিস্তান সরকারের দাবি, ট্রাম্পের সরাসরি মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি আরও অবনতি থেকে রক্ষা পেয়েছে এবং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। বিবৃতিতে তাঁকে “সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী” বলে অভিহিত করে বলা হয়েছে, তার দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বের কারণেই দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র যুদ্ধের মুখোমুখি না হয়ে সংলাপে ফিরে আসে।
পাকিস্তান ট্রাম্পের কূটনৈতিক তৎপরতার স্বীকৃতি দিয়ে বলেছে, তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হওয়া কেবল দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্য একটি সম্ভাব্য বিপর্যয় রোধ করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও একাধিকবার বলেছেন, তাঁর নেতৃত্বেই ভারত ও পাকিস্তান শান্তিচুক্তিতে সম্মত হয়েছে এবং দুই দেশকে বাণিজ্য ও উন্নয়নের দিকে মনোযোগী হতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
এছাড়া কাশ্মীর ইস্যুতেও ট্রাম্পের “আন্তরিক মধ্যস্থতার প্রস্তাব” এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর আগ্রহকে পাকিস্তান বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুসারে কাশ্মীর সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি আসবে না—এই অবস্থানে ট্রাম্প যে সহানুভূতিশীল ভূমিকা রেখেছেন, সেটি তাদের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ।
পাকিস্তানের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের এই প্রস্তাব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। কারণ, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি এরই মধ্যে একটি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত ভারতের অভ্যন্তরীণ সামরিক কৌশলের ফল এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আনুষ্ঠানিক মধ্যস্থতা ছিল না।
তবে ইসলামাবাদ বলছে, ট্রাম্পের সক্রিয় কূটনৈতিক যোগাযোগ ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতায় তাঁর অবদান শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট ও গাজার মানবিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এই প্রস্তাব এমন এক সময়ে এলো, যখন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক নতুন করে দৃঢ় হতে শুরু করেছে। কিছুদিন আগেই পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের হোয়াইট হাউস সফর এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনাও তা ইঙ্গিত দেয়। ট্রাম্প প্রশাসন আবারো পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চায়—এমন বার্তা এ প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে পড়েছে বলেই বিশ্লেষকদের অভিমত।
সূত্র: ডন
Leave a comment