ঝিনাইদহ শহরতলীর গোপীনাথপুর এলাকায় স্বামীর তালাবদ্ধ দোকানঘর থেকে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত নারীর নাম তাসলিমা খাতুন (৩০)। তিনি ওই এলাকার কাঠমিস্ত্রি লাল মিয়ার স্ত্রী।
রোববার (১২ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঝিনাইদহ–চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত একটি ফার্নিচারের দোকান থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী লাল মিয়া পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লাল মিয়া পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। তিনি গোপীনাথপুর এলাকায় নিজের নামে একটি ফার্নিচারের দোকান পরিচালনা করতেন। রোববার সকালে প্রতিদিনের মতোই তিনি দোকানে যান। কিছু সময় পর সেখানে তার স্ত্রী তাসলিমা খাতুনও যান।
দিনের শেষে সন্ধ্যার পরও দুজনের কেউ বাড়ি না ফেরায় উদ্বেগে পড়ে পরিবার। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তাদের ছেলে দোকানে গিয়ে দেখে দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। সন্দেহবশত সে তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে এবং সেখানে মায়ের নিথর দেহ দেখতে পায়।
পরিস্থিতি দেখে সে চিৎকার করলে স্থানীয়রা ছুটে আসে। পরে খবর পেয়ে ঝিনাইদহ সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমরা খবর পাওয়ার পর রাতেই ঘটনাস্থলে যাই। দোকানের ভেতরে তাসলিমা খাতুনের মরদেহ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখি। প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করছি। তার স্বামী লাল মিয়া ঘটনার পর থেকে পলাতক।”
তিনি আরও জানান, “মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত চলছে, তবে স্বামী লাল মিয়াকে খুঁজে বের করা এখন তদন্তের প্রধান অগ্রাধিকার।” গোপীনাথপুর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, লাল মিয়া ও তাসলিমা দম্পতির মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিল। প্রায়ই তাদের ঝগড়া শোনা যেত। কেউ কেউ বলছেন, সাম্প্রতিক সময়েও তাদের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব চলছিল।
একজন প্রতিবেশী বলেন, “তাসলিমা শান্ত-স্বভাবের মানুষ ছিলেন। ওদের মধ্যে মাঝে মাঝে ঝগড়া হতো, কিন্তু এমন কিছু ঘটবে ভাবিনি।”
এ বিষয়ে ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “আমরা ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। প্রাথমিকভাবে এটি হত্যার মামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনের এক প্রতিনিধি বলেন, “এই ধরনের হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে, গৃহবিবাদ বা পারিবারিক কলহ থেকে নারী নির্যাতন কতটা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনতেই হবে।”
Leave a comment