জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ভোট গণনা শেষ পর্যন্ত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে করার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) স্বাক্ষরিত কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়, যা বৃহস্পতিবার সকালে সবার নজরে আসে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর ভোট গণনা কার্যক্রম ম্যানুয়ালি সম্পন্ন করা হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করছি।”
এর আগে নির্বাচন কমিশন জানায়, ভোট গণনা করা হবে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মাধ্যমে। তবে এ ঘোষণার পর থেকে কিছু প্রার্থী ও সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করে।
বুধবার রাতে শাখা ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী, বাগছাস (বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ) প্যানেলের জিএস প্রার্থী তৌহিদ সিয়াম এবং সংশপ্তক পরিষদের এজিএস (নারী) প্রার্থী সোহাগি সামিয়া কমিশনের কাছে লিখিত আপত্তি জানান।
তাদের অভিযোগ, যে প্রতিষ্ঠান ব্যালট পেপার ও গণনাকারী যন্ত্র সরবরাহ করছে, সেটি নাকি জামায়াতের এক নেতার মালিকানাধীন। এর ফলে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে তারা দাবি করেন।
ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী বলেন,“আমরা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ চাই। যদি ভোট গণনায় কোনো বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকে, তবে শিক্ষার্থীদের আস্থা নষ্ট হবে। তাই ম্যানুয়াল গণনাই একমাত্র সমাধান।”
বাগছাসের প্রার্থী তৌহিদ সিয়ামও একই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “গণনাকারী যন্ত্র ব্যবহার করা হলে স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কমিশনের এই সিদ্ধান্ত সঠিক ও সময়োপযোগী।”
নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, “প্রার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করেছে। শিক্ষার্থীদের আস্থা বজায় রাখা এবং নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্যই ম্যানুয়াল ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
জাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছে। দীর্ঘ সময় পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ তুঙ্গে। তবে ভোট গণনা পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ম্যানুয়াল গণনা সময়সাপেক্ষ হলেও এটি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। আবার কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এতে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হতে পারে এবং বিরোধ বাড়তে পারে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ সালে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এবার নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ইতিহাসে বড় একটি মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
Leave a comment