টানা পাঁচ দিনের কাজ আর মাত্র দুই দিনের ছুটি—এই ধারা ভাঙার দাবি এখন বিশ্বজুড়ে জোরালো হচ্ছে। গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, চার দিনের কর্মসপ্তাহ কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক এবং উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রেও ক্ষতি করে না। তবু নানা দেশ ও প্রতিষ্ঠানে এটি এখনো নিয়মতান্ত্রিকভাবে চালু হয়নি।
নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের ১৪১টি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, ছোট কর্মসপ্তাহ কর্মীদের ক্লান্তি কমায়, কাজের প্রতি সন্তুষ্টি বাড়ায় এবং শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যে উন্নতি আনে। গবেষক ওয়েন ফ্যান জানান, ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই পরীক্ষামূলক সময় শেষে চার দিনের কর্মপদ্ধতি চালু রেখেছে।
তবে দীর্ঘ সময় কাজ করার সংস্কৃতি অনেক দেশে এই পরিবর্তনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীন ও ভারতীয় কর্মীরা বৈশ্বিক বাজারের কারণে অনিয়মিত ও অতিরিক্ত সময় কাজ করতে বাধ্য হন। জাপানে তো ‘কারোশি’—অতিরিক্ত কাজের কারণে মৃত্যু—আলাদা শব্দে পরিচিত। সেখানে কাজকে শুধু পেশা নয়, সামাজিক প্রতিশ্রুতি হিসেবে দেখা হয়। তাই ছোট কর্মসপ্তাহকে অনেকে এখনো বাস্তবায়নের অযোগ্য ভেবে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরীক্ষামূলকভাবে চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু হয়েছে। আইসল্যান্ডের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ এখন কম সময় কাজ করেন। জার্মানি, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেনসহ বহু দেশে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা মিলেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার স্টেলেনবশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সেন্টারে এই নীতি চালুর পর অসুস্থতাজনিত ছুটি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের একটি পুলিশ বিভাগেও উৎপাদনশীলতা বেড়েছে, খরচ কমেছে এবং পদত্যাগের হার অর্ধেকে নেমে এসেছে।
তবু সব খাতের জন্য এই নীতি সমানভাবে কার্যকর নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কৃষি, খনি কিংবা অনানুষ্ঠানিক শ্রমকেন্দ্রিক দেশে কাজের ধারা পুনর্গঠনের সুযোগ সীমিত। তবে তরুণ প্রজন্মের দাবি, কাজ ও জীবনের ভারসাম্য এখন বেতনের চেয়েও বড় বিষয়। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে নতুন প্রজন্ম ক্রমেই এই পরিবর্তনের দাবি তুলছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কোভিড–পরবর্তী বিশ্বে ‘গ্রেট রেজিগনেশন’, ‘কোয়ায়েট কুইটিং’ কিংবা চীনের ‘লাইং ফ্ল্যাট’-এর মতো প্রবণতা প্রমাণ করে দিয়েছে যে তরুণেরা অতিরিক্ত কাজের সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করছেন। পরিবর্তনের গতি ধীর হলেও, আগামী দিনে চার দিনের অফিসই হতে পারে নতুন বাস্তবতা।
Leave a comment