ভারত ও রাশিয়ার দীর্ঘদিনের কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করার প্রেক্ষাপটে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হলো বার্ষিক ভারত–রাশিয়া সম্মেলন। দু’দিনের সফরে ভারতের রাজধানীতে পৌঁছানোর পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুই নেতার এই বহুল আলোচিত সাক্ষাৎ, যা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নজরে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
পুতিনের হাতে মোদি যে ছয়টি উপহার তুলে দেন, তা শুধু সৌজন্য নয়, বরং ভারতীয় ঐতিহ্য, শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতিনিধি। প্রতিটি উপহারই ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিশেষত্ব, কারুশিল্প এবং ঐতিহাসিক পরিচয়ের ধারক।
উপহারের তালিকায় প্রথমেই ছিল আসামের বিশ্ববিখ্যাত চা। সুবাস, গাঢ় রং ও স্বাদের জন্য খ্যাত এই চা । পুতিনের মতো রাষ্ট্রনায়কের জন্য এই চা নির্বাচন কার্যত দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতীক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। চায়ের সঙ্গে ভারতের ঐতিহ্যবাহী আতিথেয়তার ছোঁয়া যুক্ত হয়েছে এই উপহারের মাধ্যমে।
কাশ্মীরের প্রিমিয়াম মানের জাফরানও ছিল এই বিশেষ উপহারের মধ্যে। বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল মশলা হিসেবে পরিচিত জাফরান কেবল স্বাদ ও সুগন্ধই নয়, কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী কৃষিরও প্রতীক।
পুতিনকে দেওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের তৈরি এক অনন্য রুপোর টি-সেট। শতাব্দী ধরে রুপোর কারুকাজে বিখ্যাত এই অঞ্চল। ঐতিহ্যশিল্পীদের বিশেষ হাতে তৈরি এই টি-সেটে ছিল চায়ের পেয়ালা, কেটলি ও কয়েকটি পরিবেশন পাত্র। নকশা, কারুকাজ ও নান্দনিকতায় এটি ভারতের ঐতিহাসিক শিল্প ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ।
উপহারের তালিকায় আরও ছিল মহারাষ্ট্রে নির্মিত রুপোর ঘোড়া। প্রতীকীভাবে স্থিতিশীলতা, শক্তি ও গতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে এই শিল্পকর্মে—যাকে দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্বের প্রতীক হিসেবেও ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
ভারতের ঐতিহাসিক নগরী আগরায় তৈরি একটি মার্বেল দাবার সেটও উপহার দেন মোদি। মার্বেল শিল্পের জন্য আগরা বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। আর দাবা নিজেই কৌশল, বুদ্ধিমত্তা ও কূটনৈতিক সমীকরণের প্রতীক—যা দুই দেশের সমান কৌশলগত বোঝাপড়ার দিকটি প্রকাশ করে।
উপহারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল ‘ভগবদ্গীতা’-র রাশিয়ান অনূদিত সংস্করণ। অর্জুন ও কৃষ্ণের সংলাপভিত্তিক এই তাত্ত্বিক গ্রন্থ হিন্দু দর্শনের মূলমন্ত্র বহন করে। মোদি–পুতিন কূটনীতিতে এটি বন্ধুত্ব, দার্শনিক মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের তাৎপর্য তুলে ধরে বলে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে।
ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক গত কয়েক বছরে নতুন মাত্রা পেয়েছে । বিশেষত জ্বালানি বাণিজ্যে রাশিয়া থেকে খনিজ তেল আমদানি ভারতের জন্য কৌশলগত লাভ বয়ে এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আগের প্রশাসন ভারতের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ করলেও দিল্লি তার রাশিয়া-নীতি পরিবর্তন করেনি।
বহুপাক্ষিক বৈঠকে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে পরিবর্তনের সময়ে এই সফর ও উপহার বিনিময় সম্পর্কের উষ্ণতা ও দৃঢ়তা আরও স্পষ্ট করেছে।
Leave a comment