পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের চামান সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা আবারও নতুন করে তীব্র হয়ে উঠেছে। গত দুদিনে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় অন্তত ২৩ তালেবান সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পাক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ। রোববার (৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বেলুচিস্তানের চামান জেলার জামান সেক্টরে সংঘর্ষটি ঘটে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শুক্রবার গভীর রাতে আফগান তালেবান বাহিনী প্রথমে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে। সীমান্তের জামান সেক্টরে ছোট অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তানি পোস্টগুলোর দিকে তারা গুলি ছোড়ে বলে দাবি করা হয়। আকস্মিক এই হামলার পর পাকিস্তানি সেনারা তাৎক্ষণিকভাবে জবাব দেয়।
সূত্রমতে, সংঘর্ষের প্রাথমিক পর্যায়ে উভয় পক্ষই হালকা অস্ত্র ব্যবহার করে। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে তুমুল গোলাগুলি চলে । তবে তালেবান যোদ্ধারা পাল্টা জবাব দিতে পারে এমন সম্ভাবনা নস্যাৎ করতে পাকিস্তানি বাহিনী পরে ভারী অস্ত্র মোতায়েন করে। এতে রকেট লঞ্চার, কামান এবং ভারী মেশিনগান ব্যবহার করা হয়। এই হামলায় আফগান তালেবান সেনাদের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত চৌকি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় বলে দাবি করা হয়।
পাকিস্তানি সূত্রগুলোর দাবি, হামলার সময় সাধারণ আফগান জনগণের কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য ‘নির্ভুল অস্ত্র’ ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রথম দফায় হামলার পর তালেবান যোদ্ধারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থান নেয়। সেখানে আশ্রয় নিয়েই তারা আবারও পাকিস্তানি পোস্টগুলোর দিকে গুলি ছোড়ে। এর জবাবে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ওই জনবহুল এলাকাগুলোতেও ভারী অস্ত্র দিয়ে পাল্টা হামলা চালায়।
চামান সীমান্তে এই সংঘর্ষ নতুন নয়। বহু বছর ধরে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা এবং ছোটখাটো সংঘর্ষ ঘটছে। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে এ ধরনের উত্তেজনা আরও বেড়েছে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা। সীমান্তে বেআইনি পারাপার, চোরাচালান এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আশ্রয়–প্রশ্রয়ের অভিযোগে দুই দেশের সম্পর্ক আগেই টানাপোড়েনে ছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই নতুন সংঘর্ষ দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে তালেবান নেতৃত্বকে, সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে, আফগান পক্ষ পাকিস্তানকে সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য দায়ী করে থাকে।
এদিকে আফগান তালেবান প্রশাসন চামান সীমান্তে হতাহতের বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলির শব্দ পুরো রাতজুড়ে শোনা গেছে এবং সীমান্তপথ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছে।
পাকিস্তানি বাহিনীর দাবি—শুধু আত্মরক্ষামূলক কারণেই তারা এই পাল্টা হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মহল এখনো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সীমান্তের নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতি যেন আরও অবনতি না ঘটে, সে জন্য বিশেষজ্ঞরা দুই দেশের মধ্যে তাৎক্ষণিক সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন।
Leave a comment