বাংলা চলচ্চিত্রের বরেণ্য নির্মাতা, জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘চাঁদের আলো’, ‘নদের চাঁদ’ এবং আরও বহু স্মরণীয় সিনেমার পরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (২২ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন নির্মাতা গাজী মাহবুব এবং ‘চাঁদের আলো’ ছবির অভিনেত্রী রুমানা ইসলাম। গাজী মাহবুব জানান, “বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা শেখ নজরুল ইসলাম আমার ওস্তাদজি। তিনি রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইবনে সিনা হাসপাতালে মারা যান। রাতেই তার মরদেহ নাটোরের উদ্দেশে নেওয়া হবে। রোববার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।”
পারিবারিক সূত্র জানায়, গত ১৬ নভেম্বর দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে টানা ৪৮ ঘণ্টা আইসিউতে রেখে পর্যবেক্ষণে করা হয়। পর্যবেক্ষণ শেষ হয় শনিবার সকাল ১০টায়। রাতে অবস্থার অবনতি হলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৩৫ সালের ৭ নভেম্বর নাটোরের কালিগঞ্জ থানার পিপরুল গ্রামে শেখ নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। চলচ্চিত্রে পথচলা শুরু হয় কিংবদন্তি নির্মাতা জহির রায়হান ও খান আতাউর রহমানের সহকারী পরিচালক হিসেবে। তাদের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যেই তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণের কৌশল শিখে নিজের পরিচালনা–জীবনের ভিত্তি গড়ে তোলেন।
১৯৭৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘চাবুক’ ছিল তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। এরপর তিনি আর পেছনে ফিরে তাকাননি। দীর্ঘ কর্মজীবনে শেখ নজরুল ইসলাম উপহার দিয়েছেন বহু প্রজন্মের দর্শকের প্রিয় কিছু সিনেমা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
• নদের চাঁদ
• এতিম
• নাগিন
• মাসুম
• ঈদ মোবারক
• আশা
• পরিবর্তন
• নতুন পৃথিবী
• দিদার
• সালমা
• বউ শাশুড়ি
• কসম
• বিধাতা
• স্ত্রীর পাওনা
• চাঁদের আলো
• চাঁদের হাসি
• চক্রান্ত
• সিংহ পুরুষ
• সব খতম
তার পরিচালনায় নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো দর্শকপ্রিয়তা ও বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছে। পারিবারিক, সামাজিক, রোমান্টিক ও ট্র্যাজেডি ঘরানার গল্পে তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র। পরিচালনার পাশাপাশি শেখ নজরুল ইসলাম অভিনয়েও ছিলেন দক্ষ। ষাটের দশকে ‘সাত ভাই চম্পা’ চলচ্চিত্রে তার অভিনয় ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। এছাড়া জহির রায়হানের অসমাপ্ত প্রামাণ্যচিত্র ‘লেট দেয়ার বি লাইট’-এ তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি একটি চরিত্রে অভিনয় করেন।
তার মৃত্যুতে চলচ্চিত্র অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অভিনেতা, নির্মাতা, শিল্পী ও সহকর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। বাংলা চলচ্চিত্রে তার অবদানকে অনেকে ‘যুগান্তকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বরেণ্য এই নির্মাতার মৃত্যুতে দেশের চলচ্চিত্র শিল্প হারাল আরেক গুণী ব্যক্তিত্বকে। তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো বাংলা সিনেমার ঐতিহ্য ও ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে
Leave a comment