চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া এলাকায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের ঘটনায় পাশের একটি বহুতল আবাসিক ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের চারটি দলের দ্রুত পদক্ষেপে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সৌভাগ্যবশত কোনো প্রাণহানি ঘটেনি, তবে ভবনের একাধিক তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে বাকলিয়া অ্যাকসেস সড়কের বিদ্যুৎ বিতরণকেন্দ্রের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাত ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা যায়, রাত ৯টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে বাকলিয়া বিদ্যুৎ বিতরণকেন্দ্রের সামনে থাকা একটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের বহুতল আবাসিক ভবনে। স্থানীয়রা দ্রুত ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন এবং ভবনের বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেন।একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “বিস্ফোরণের শব্দ এত জোরে ছিল যে আশেপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আগুন লেলিহান শিখায় পরিণত হয়।”
ঘটনার খবর পেয়ে বাকলিয়া ও আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশন থেকে মোট পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। প্রায় এক ঘণ্টা তৎপরতার পর রাত ১০টার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মন্নান জানান, “বাকলিয়া অ্যাকসেস সড়কে একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিস্ফোরিত হয়ে পাশের বহুতল ভবনে আগুন ধরে যায়। আমাদের পাঁচটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভবনটির দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।”
তিনি আরও বলেন, “আগুনের সূত্রপাত বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
আগুনে ভবনের অন্তত তিনটি তলায় আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও কিছু ব্যক্তিগত সামগ্রী পুড়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে কয়েক লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
চট্টগ্রাম ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর ওই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল, যাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে সহজ হয় এবং পুনরায় কোনো বিস্ফোরণ না ঘটে।
দুর্ঘটনার সময় ভবনের ভেতরে থাকা অনেক বাসিন্দা আতঙ্কে বাইরে বের হয়ে আসেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা রুবিনা আক্তার বলেন, “বিস্ফোরণের পর দেখি আগুন আমাদের ভবনের দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে দ্রুত নিচে নেমে যাই। ফায়ার সার্ভিস সময়মতো না এলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।”
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ধরনের ট্রান্সফরমার স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে নিরাপত্তা মান নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় প্রয়োজন। ঘটনাটির পর ওই এলাকায় নিরাপত্তা পরিদর্শন জোরদারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের বাকলিয়ায় ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের এ ঘটনাটি আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে নগর এলাকায় বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার গুরুত্ব। সৌভাগ্যবশত কোনো প্রাণহানি না হলেও এই দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে সতর্কতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করেছে। ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত পদক্ষেপে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো গেলেও, কর্তৃপক্ষের প্রতি নাগরিকদের আহ্বান— এমন দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে, সেজন্য নিয়মিত পরিদর্শন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি।
Leave a comment