চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালি সমুদ্রসৈকতে ভেসে এসেছে এক মৃত ডলফিন। স্থানীয়দের ধারণা, মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) রাতের জোয়ারের স্রোতে প্রাণীটি সৈকতের পাড়ে এসে আটকে পড়ে। বুধবার সকালে সৈকতের দোকানগুলোর পেছনে ডলফিনটিকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বন বিভাগকে খবর দেন।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপকূলীয় বন বিভাগের সীতাকুণ্ড রেঞ্জ কর্মকর্তা রনি আলি। তিনি জানান, খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডলফিনটির নমুনা সংগ্রহ করেন এবং পরে পচন রোধে দ্রুত মাটি চাপা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডলফিনটির শরীরে পচন ধরেছে এবং চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাণীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ছয় ফুট, গোল মাথা, ঠোঁটবিহীন মুখ ও ছোট বৃত্তাকার পাখনা রয়েছে। এ বৈশিষ্ট্য দেখে স্থানীয়রা ধারণা করছেন এটি ইরাবতী ডলফিন—যা বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া বিপন্ন প্রজাতির একটি সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী। একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “সকালে দোকান খোলার সময় দেখি একটা বড় ডলফিন পড়ে আছে। শরীর ফুলে গেছে, দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। মনে হয় অনেক আগেই মারা গেছে।”
বন কর্মকর্তা রনি আলি বলেন, “আমরা খবর পাওয়ার পরই ঘটনাস্থলে যাই। ডলফিনটি আকারে বড় এবং ইতোমধ্যে পচন শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি ইরাবতী ডলফিন , তবে নিশ্চিত হতে কিছু নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, ডলফিনটি হয়তো জোয়ারের পানিতে ভেসে এসে সৈকতের অগভীর অংশে আটকে পড়ে মারা গেছে, কিংবা জালে জড়িয়ে মৃত্যুর পর ভেসে এসেছে। ইরাবতী ডলফিন (Orcaella brevirostris) সাধারণত বঙ্গোপসাগর, সোনাদিয়া দ্বীপ, কক্সবাজার ও সুন্দরবনের মোহনায় দেখা যায়। এটি বিশ্বের ৪৫টি বিপন্ন সামুদ্রিক ডলফিন প্রজাতির একটি। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাণিবিজ্ঞান সংরক্ষণ সংস্থা (IUCN) এ প্রজাতিটিকে ‘ভালনারেবল’ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী ইরাবতী ডলফিন সংরক্ষিত প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। তবুও মাছ ধরার জাল, জাহাজ চলাচলের শব্দদূষণ, তেল দূষণ এবং আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে প্রতি বছর একাধিক ডলফিনের মৃত্যু হচ্ছে।
পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকর্মীরা বলছেন, সমুদ্রসৈকত ও মোহনায় নিয়মিত নজরদারি না থাকায় ডলফিনসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না।
পরিবেশ গবেষক আরিফুল ইসলাম বলেন, “ডলফিনের মৃত্যুর ঘটনা এখন প্রায় নিয়মিত হয়ে উঠছে। এগুলো প্রাকৃতিক না মানবসৃষ্ট—তা জানার জন্য যথাযথ তদন্ত জরুরি। প্রতিটি মৃত্যুর পেছনে কারণ অনুসন্ধান না করলে সংরক্ষণ কার্যক্রম ফলপ্রসূ হবে না।”
গুলিয়াখালি সৈকতে মৃত ডলফিন ভেসে আসার ঘটনাটি বাংলাদেশ উপকূলের সামুদ্রিক প্রাণ সংরক্ষণে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলফিনের মৃত্যু কেবল একটি প্রাণীর প্রাণহানি নয়, এটি পুরো সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যের জন্যও হুমকি।
Leave a comment