মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়াতেমালায় ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দেশটির ইন্টার-আমেরিকান মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাস গভীর খাদে পড়ে গেলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় আরও অন্তত ১৯ জন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) গুয়াতেমালার পশ্চিমাঞ্চলীয় তোতোনিকাপান বিভাগের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ‘আলাস্কা পিক’-এ এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। ঘন কুয়াশা, সরু রাস্তা এবং খাড়া পাহাড়ি বাঁকের কারণে সেখানে প্রায়ই দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়।
স্থানীয় দমকল বাহিনীর মুখপাত্র লিয়ান্দ্রো আমাদো জানান, দুর্ঘটনার সময় ওই এলাকায় কুয়াশার ঘনত্ব ছিল অত্যন্ত বেশি, ফলে চালকের দৃষ্টিশক্তি মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়ে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, গুয়াতেমালা সিটি থেকে মেক্সিকো সীমান্তসংলগ্ন সান মার্কোস বিভাগের দিকে যাত্রাকালে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৭৫ মিটার গভীর খাদে পড়ে যায়।
আমাদো আরও জানান, টনাস্থলেই অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ, ৩ জন নারী এবং ১ জন শিশু রয়েছে। গুরুতর আহত ১৯ জনকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা।
দুর্ঘটনার পরপরই দমকল বাহিনী, পুলিশ এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বাসটি পড়ে যাওয়ায় উদ্ধারকাজে বেগ পেতে হয় উদ্ধারকর্মীদের। দমকল বাহিনীর পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্ঘটনাস্থল ও উদ্ধার অভিযানের একাধিক ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, বিধ্বস্ত বাসটির চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষের মধ্য থেকে আহত ও নিহতদের উদ্ধার করছেন কর্মীরা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের স্বজনরা ঘটনাস্থল ও আশপাশের হাসপাতালগুলোতে ভিড় করতে থাকেন। অনেকেই তাদের প্রিয়জনের খোঁজে উদ্বিগ্ন অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন।
এই দুর্ঘটনার পর গুয়াতেমালায় সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দেশটিতে পাহাড়ি ও দুর্গম সড়কে যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনা নতুন কিছু নয়। চলতি বছরেই একই ধরনের এক দুর্ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন, যা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টার-আমেরিকান মহাসড়কের কিছু অংশে সড়ক অবকাঠামো আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি। ঘন কুয়াশা প্রবণ এলাকায় সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড, গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত যানবাহন পরীক্ষা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা কমানো কঠিন হবে।
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। প্রাথমিকভাবে চালকের অসাবধানতা, অতিরিক্ত গতি এবং আবহাওয়াজনিত ঝুঁকিকে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত মন্তব্য করতে নারাজ কর্তৃপক্ষ।
গুয়াতেমালার প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকেও নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার আহতদের চিকিৎসা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াবে।
Leave a comment