গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে ও যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ইউরোপজুড়ে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে নানা শহর। যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন ও পর্তুগালসহ একাধিক দেশে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে গাজা অবরোধ প্রত্যাহার ও যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ থেকে অন্তত ৪৪২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে হাজারো মানুষ মিছিল করেছেন। বার্সেলোনা, মাদ্রিদ, রোম, লিসবন ও লন্ডনজুড়ে বিক্ষোভকারীরা ‘ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা চাই’ ও ‘গণহত্যা বন্ধ করো’ স্লোগান দেন।
স্পেনের বার্সেলোনা ও মাদ্রিদে বিক্ষোভের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই। তবে ইসরায়েলি বাহিনী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে মানবিক সহায়তাবাহী নৌবহর আটকানোর পর রোম ও লিসবনে নতুন করে প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়।
নৌবহরটি বার্সেলোনা থেকে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করেছিল এবং খাদ্যসংকটে থাকা ফিলিস্তিনিদের কাছে সাহায্য পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। ইসরায়েল এ অভিযানে ৪৫০ জনকে আটক করে, যাদের মধ্যে ৪০ জনের বেশি স্প্যানিশ নাগরিক এবং বার্সেলোনার সাবেক মেয়রও রয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার ইতালিজুড়ে একদিনের সাধারণ ধর্মঘটে অংশ নেন ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। এটি ছিল ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে দেশটির সবচেয়ে বড় গণআন্দোলনগুলোর একটি।
আল জাজিরা জানায়, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে স্পেনে ফিলিস্তিনপন্থী জনসমর্থন বেড়েছে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ প্রকাশ্যে গাজা যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং ইসরায়েলি দলগুলোকে আন্তর্জাতিক খেলাধুলা থেকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বার্সেলোনা সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, শনিবারের বিক্ষোভে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ অংশ নেন। শহরের প্রধান সড়ক Passeig de Gràcia জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
রোমেও বড় আকারের বিক্ষোভ হয়েছে। তিনটি ফিলিস্তিনি সংগঠন, স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে এ কর্মসূচি আয়োজন করে। ইতালির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন রাই জানায়, বিক্ষোভকারীরা পোর্টা সান পাওলো থেকে মিছিল শুরু করে সান জিওভান্নিতে গিয়ে শেষ করেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে “প্যালেস্টাইন অ্যাকশন” নামের নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থনে হাজারো মানুষ সমবেত হন। ম্যানচেস্টারের এক সিনাগগে সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলার পর পুলিশ বিক্ষোভ না করার অনুরোধ জানিয়েছিল, তবে আয়োজকেরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
লন্ডনের কেন্দ্রীয় এলাকায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ থেকে অন্তত ৪৪২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মাটিতে বসে পোস্টারে স্লোগান লেখার সময় পুলিশ অনেককে সরিয়ে নিয়ে যায়। এদিকে হামাস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার কিছু অংশ তারা মেনে নিতে রাজি হয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং গাজা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
Leave a comment