ভারতের মুম্বাই শহরের এক সাধারণ নার্সিং হোমে ১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল জন্ম নেওয়া শিশুটি একদিন হয়ে উঠবেন ক্রিকেট বিশ্বের ঈশ্বর, তা কি কেউ ভেবেছিল? শচীন রমেশ টেন্ডুলকর, যিনি ক্রিকেটকে শুধুমাত্র একটি খেলা নয়, বরং আবেগ, ভালোবাসা এবং ভারতের কোটি কোটি মানুষের আশার প্রতীক বানিয়ে তুলেছিলেন, আজ তাঁর ৫১তম জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক তাঁর অতুলনীয় পথচলা।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করা এই ক্ষুদে প্রতিভাবান ছেলেটি ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছিলেন ব্যাট হাতে নির্ভরতার অন্য নাম। ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেকের মধ্য দিয়েই শুরু হয় এক দীর্ঘ, গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। শচীনের ব্যাট থেকে এসেছে ১০০টি আন্তর্জাতিক শতক—টেস্টে ৫১টি ও ওয়ানডেতে ৪৯টি। এ কীর্তি আজও অটুট, অপ্রতিরোধ্য।
শচীন ছিলেন কেবল রান করার মেশিন নন; ছিলেন শৈল্পিক ব্যাটিংয়ের প্রকৃত প্রতীক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ২০১৩ সালের নভেম্বরে তাঁর শেষ টেস্টটি যেন পুরো জাতিকে আবেগে ভাসিয়ে দিয়েছিল। চোখে জল এনে দিয়েছিল সেই বিদায়-বক্তব্য, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “মাই লাইফ বিটুইন টু টুয়েলভ ইয়ার্ডস।”
তিনি ভারতের হয়ে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ২০০ টেস্ট খেলার বিরল রেকর্ড গড়েছেন। ওয়ানডেতে ১৮,৪২৬ রান এবং টেস্টে ১৫,৯২১ রান—প্রতিটি সংখ্যাই তাঁর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও নিখুঁত কৌশলের দলিল। শুধু ব্যাট হাতে নয়, মাঝেমধ্যে বল হাতেও এনে দিয়েছেন চমক—ওয়ানডেতে তাঁর নামের পাশে আছে ১৫৪টি উইকেট।
শচীনের কীর্তি শুধু মাঠে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়ে তাঁর চোখের অশ্রু এবং সতীর্থদের কাঁধে তাঁর সম্মান—ক্রিকেট ইতিহাসের এক আবেগঘন অধ্যায়। এরপর ২০১৪ সালে তাঁকে দেওয়া হয় ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’—যা পাওয়া তিনিই প্রথম ক্রীড়াবিদ।
তাঁর খেলার বাইরেও ছিল শিক্ষা। কখনও বিতর্কে জড়াননি, কখনও প্রতিপক্ষকে অসম্মান করেননি। তাঁর নম্রতা ও শৃঙ্খলা তাঁকে করে তুলেছে ক্রীড়া জগতের নায়ক, এক পরিণত মানবিক প্রতিমূর্তি।
আজ তাঁর জন্মদিনে গোটা ভারতবাসী আবারও কুর্নিশ জানাচ্ছে সেই কিংবদন্তিকে, যাঁর ব্যাটের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোটি হৃদয়ের স্পন্দন। “শচীন, শচীন!”—এই ধ্বনি এখনও যেন আকাশ-বাতাস কাঁপায়, স্মরণ করিয়ে দেয়, একজন শচীন টেন্ডুলকর যুগে একবারই জন্ম নেন।
শুভ জন্মদিন, মাস্টার ব্লাস্টার।
Leave a comment