নতুন করে প্রয়াত অভিনেত্রী তানিন সুভার মৃত্যুকে ঘিরে আলোচনায় এসেছে রহস্যময় এক শক্তি, যাকে কেউ বলে “কালো জাদু”, কেউ আবার বলে ‘অভিশাপ’। প্রিয় এই অভিনেত্রীর আকস্মিক মৃত্যু এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে মিডিয়া মহলেও , এটা কি নিছক কাকতালীয় ঘটনা, নাকি এর পেছনে রয়েছে অশুভ শক্তির কোনো প্রভাব?
“ কখনো কি এমনটা অনুভব করেছেন? কেউ যেন আপনাকে অনুসরণ করছে, অথচ পেছন ফিরে তাকালে কেউ নেই? কখনো কি কোনো অদ্ভুত কণ্ঠস্বর শুনেছেন , অথচ চারপাশে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা?” , ঠিক এমনসব রহস্যময় অনুভূতি নিয়েই তানিন সুভার জীবনের শেষ অধ্যায় শুরু হয়েছিল।
কালো জাদু এক রহস্যময় অধ্যায়, যা হাজার বছর ধরে মানবজাতিকে বিভ্রান্ত ও ভীত করে রেখেছে। এই চর্চা সাধারণত অন্যের ক্ষতিসাধন বা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়। যদিও আধুনিক যুগে অনেকে একে কুসংস্কার বলেই মনে করেন, তবে ইসলামি ধর্মগ্রন্থ কোরআন ও হাদীসে কালো জাদুর অস্তিত্ব স্বীকৃত। সূরা বাকারা, আয়াত ১০২-এ হারুত ও মারুত ফেরেশতার মাধ্যমে মানুষের মাঝে জাদুবিদ্যার বিস্তারের উল্লেখ রয়েছে। এমনকি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-ও কালো জাদুর শিকার হয়েছিলেন বলে হাদিসে বর্ণিত রয়েছে।
নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১৯ মে, একটি পোস্টে তানিন সুভা লেখেন: “কোনদিন আমি তাবিজ ও কুফরিতে বিশ্বাস করতাম না, এখন করি। সুস্থ একটা মানুষকে এভাবে মেরে ফেলার চেষ্টা করে কি লাভ? ঘরের আনাচে-কানাচে কত কি যে পেলাম। কেন এমন করছেন? আমি তো কারো কোনো ক্ষতি করিনি। লাস্ট চার মাস ধরে আমি অসুস্থ আর অসুস্থ। এসবের ফল পাবেন। চিন্তা করবেন না। আল্লাহ ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না।”
তিনি তার শারীরিক অবস্থার অবনতির পাশাপাশি কালো জাদুর প্রতি বিশ্বাস জন্মানোর কথা প্রকাশ করেন এই পোস্টে। এর পর, ২ জুন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি এবং হাসপাতালে ভর্তি হন। শেষমেশ ১০ জুন সন্ধ্যা ৭টা ৫৭ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
তানিনের পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের দাবি, কালো জাদুর শিকার ছিলেন তানিন। একাধিক তাবিজ পাওয়া যায় তার বাসা থেকে। এমনকি অনেকে দাবি করেছেন, তার ব্রেনে ‘দুইটি বান’ (অভিশপ্ত শক্তি) প্রয়োগ করা হয়েছিল—যা ধীরে ধীরে তার মস্তিষ্ককে নিস্ক্রিয় করে তোলে। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, মৃত্যুর আগমুহূর্তেও তার হৃদস্পন্দন কিছুটা সচল থাকলেও সম্পূর্ণ অচল ছিল মস্তিষ্ক ।
অনেক নেটিজেন ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ঘটনার তদন্তের দাবি তুলেছেন। তারা বলছেন, বিষয়টি শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞানের ব্যর্থতা নয়, বরং গভীর ষড়যন্ত্র বা অতিপ্রাকৃত কোনো শক্তির ইঙ্গিত রয়েছে এর পেছনে।
বরিশালের মোল্লাহাটের গৌড় নদীর তীরে জন্ম নেওয়া তানিন সুভা, “জমজ” নাটকে মোশাররফ করিমের বিপরীতে অভিনয়ের মাধ্যমে মিডিয়াতে অভিষেক করেন। এরপর মীর সাব্বিরের “আলাল দুলাল”, সেলিম রেজার “শিয়ানে জামাই”, নাহিদ হাসানের “ম্যারেজমিডিয়া.কম”, গুলজারের “আরতির পতাকা” সহ আরও কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেন।
“মাটির পড়ি” সিনেমার মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক হয় তার। এরপর আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তানিন , মৃত্যুর আগে তার অভিনীত কয়েকটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় ছিল। পাশাপাশি একটি বিউটি পার্লার পরিচালনা করছিলেন তিনি।
মৃত্যুর কিছুদিন আগেও তানিন লিখেছিলেন, “ দিনের পর দিন সবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখনো স্বপ্ন দেখি, একদিন অনেক ভালো থাকবো। ভালো কিছু হবে।”
তদন্তাধীন রয়েছে তানিনের মৃত্যুর বিষয়টি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, তার বাসা থেকে পাওয়া তাবিজ ও ব্যক্তিগত সামগ্রী নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি মৃত্যুর আগে দেওয়া তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টগুলোও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
Leave a comment