কলকাতা শহরের এক বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে খুলেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ‘অঘোষিত পার্টি অফিস’। দলীয় কোনো চিহ্ন না থাকলেও, ৫০০–৬০০ স্কয়ারফুটের ঘরটিই এখন ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে সমন্বয়ের কেন্দ্র। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ত্যাগের পর থেকে ভারতে অবস্থানকারী দলীয় নেতারা নিজেদের বাসাবাড়িতে ছোট বৈঠক করলেও, বড় পরিসরে কাজ চালানোর জন্য এই অফিস স্থাপন করেছেন।
কলকাতার কাছাকাছি অঞ্চলে থাকা প্রায় ২০০ জন শীর্ষ ও মধ্যম সারির নেতা—সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জেলা সভাপতি, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অনেকে—এই দপ্তরে যাতায়াত করেন। অফিসটি অত্যন্ত গোপনে পরিচালিত হয়। নেই কোনো সাইনবোর্ড, নেই বঙ্গবন্ধু বা শেখ হাসিনার ছবি। আসবাবপত্রও আগের সংস্থার রেখে যাওয়া জিনিস।
দলীয় বৈঠক ও ভার্চ্যুয়াল যোগাযোগের মাধ্যমেই এখন সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম গ্রুপ ও লাইভ অনুষ্ঠানেই দলীয় কার্যক্রম চলছে। শেখ হাসিনা নিজেও মাঝে মাঝে ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় অংশ নেন। তবে গত ৩১ জুলাই দিল্লিতে কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে সরাসরি দেখা করেছেন তিনি।
ভারতে থাকলেও দেশীয় রাজনীতিতে সক্রিয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে যাচ্ছে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, সরকারের ওপর জনগণের আস্থা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং শেখ হাসিনার সময়কালেই মানুষ ভালো ছিল বলে এখন মন্তব্য করছেন অনেকে।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনও গত বছর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন। তিনি দাবি করেছেন, দেশে আওয়ামী ঘরানার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন প্রায় ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। অনেকে পরীক্ষা দিতে পারছেন না, এমনকি পাস করলেও সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে না।
ভারত থেকে দল পরিচালনার অর্থায়ন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, দেশি-বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তা এবং আত্মীয়স্বজনদের পাঠানো অর্থেই চলছে খরচ। শরণার্থী শিবির না হলেও, নেতাদের অনেকে মধ্যবিত্ত জীবনযাত্রা থেকে সাধারণ যাপনে নেমে এসেছেন। গণপরিবহন ব্যবহার, রুমমেটের সঙ্গে বসবাস এবং খরচ ভাগাভাগিই এখন বাস্তবতা।
তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই রাজনৈতিক নির্বাসন কতদিন চলবে? ওবায়দুল কাদের বলছেন, “দিনক্ষণ ঠিক করে লড়াই হয় না, তবে লড়াই ছাড়া উপায়ও নেই।”
Leave a comment