
ভারতের পার্লামেন্টে ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে বিরোধিতা এবং আইনি লড়াই। সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছে একাধিক মামলা। কংগ্রেস ও এআইএমআইএম-এর পাশাপাশি অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডও এই আইন চ্যালেঞ্জ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করার জন্য আবেদন করেছে, যাতে তাঁকে বোঝানো যায় এই বিল কেন সংবিধানবিরোধী।
অন্যদিকে, ওয়াক্ফ বিল সমর্থন করায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ-তে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। গত দুই দিনে দল ছাড়েন পাঁচজন নেতা, যাদের মধ্যে চারজন মুসলিম এবং একজন হিন্দু। হিন্দু নেতা রাজু নায়ার তাঁর পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, “দল একটি কালা আইনকে সমর্থন করেছে, যা মুসলিমদের প্রতি অবিচারকে আরও বাড়াবে।”
বিলটির পাসের প্রতিবাদে দেশজুড়ে মুসলিম সংগঠনগুলো আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দক্ষিণ কলকাতার পার্ক সার্কাসে ৪ এপ্রিল বিক্ষোভ হয়েছে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ড জানিয়েছে, এই বিল শুধু ধর্মীয় স্বাধীনতাকে নয়, মুসলিমদের সাংবিধানিক অধিকারও লঙ্ঘন করছে।
সুপ্রিম কোর্টে কংগ্রেস নেতা মহম্মদ জাভেদ এবং এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসি যে মামলা করেছেন, তাতে বলা হয়েছে এই আইন বৈষম্যমূলক ও সংবিধানের ১৪, ২৫, ২৬, ২৯ ও ৩০ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করছে। হিন্দু ও শিখদের ট্রাস্টে সরকারের হস্তক্ষেপ নেই, অথচ ওয়াক্ফে রয়েছে—এমন দ্বিমুখী নীতি অসাংবিধানিক বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
বিজেপি সরকার যদিও দাবি করছে এই আইন মুসলিম ধর্মাচরণে হস্তক্ষেপ করছে না বরং মুসলিম সমাজের উন্নয়নের জন্যই এটি করা হয়েছে, তবুও এই বিল কেন্দ্র করে বিরোধীদের মধ্যে এক ধরনের ঐক্য দেখা যাচ্ছে। এমনকি ‘ইন্ডিয়া’ জোটও এই ইস্যুতে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধভাবে অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে, বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশের সরকার ওয়াক্ফ সম্পত্তির তালিকা হালনাগাদ করার নির্দেশ দিয়েছে—যেগুলো ওয়াক্ফ আইন কার্যকর হওয়ার আগে রেজিস্টার করা হয়নি। এটি ধর্মীয় মেরুকরণ আরও বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সব মিলিয়ে ওয়াক্ফ বিল ঘিরে ভারতের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন মেরুকরণ, যা আসন্ন নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এখন দেশের নজর সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিকে।


Leave a comment