জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শকসহ মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তিন ধাপে করা এই আবেদনগুলো এখন আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের প্রক্রিয়াধীন পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি যাঁদের বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়েছে, তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ডিএসসিসির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তথ্য ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও নসরুল হামিদ, এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ।
বিশেষভাবে, বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই রেড নোটিশ চেয়ে আবেদন করা হয়। অন্যদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ বাকিদের বিরুদ্ধে আবেদন পাঠানো হয় ১০ এপ্রিল। এর মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অন্তত তিনটি মামলা চলমান, যার একটি হলো জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত মামলা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনাসহ অধিকাংশ অভিযুক্ত বর্তমানে বিদেশে পলাতক। হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন বলে মনে করা হচ্ছে, এবং তাঁকে ফেরত আনার বিষয়ে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট অভিযোগের কারণে ইন্টারপোল সাধারণত অতিরিক্ত যাচাই-বাছাই করে, ফলে প্রক্রিয়া দীর্ঘ হতে পারে।
অন্যদিকে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ আর্থিক দুর্নীতিভিত্তিক হওয়ায় তাঁর ব্যাপারে রেড নোটিশ দ্রুত জারি হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে পুলিশের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক ইনামুল হক জানান, রেড নোটিশ জারি হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক যাতায়াতে সীমাবদ্ধতা তৈরি হয় এবং অনেক সময় তাঁরা বিদেশে গ্রেপ্তার হয়ে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোও হতে পারেন।
বর্তমানে ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে ৬,৫৮৩ জনের রেড নোটিশ রয়েছে, যার মধ্যে ৬২ জন বাংলাদেশি। নতুন করে যাঁদের বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়েছে, তাঁদের নাম এখনো সেখানে আপডেট হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, এই আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে ইন্টারপোলের সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে।
এই রেড নোটিশ আবেদন বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা বিদেশে পলাতক ব্যক্তিদের দেশে ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপের ইঙ্গিত বহন করে।
Leave a comment