আফ্রিকার ফুটবল ইতিহাসে আবারও গর্বের অধ্যায় লিখল ঘানা। মোহাম্মদ কুদুসের দারুণ এক গোলে কোমোরোসকে ১–০ ব্যবধানে হারিয়ে ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে ‘ব্ল্যাক স্টার্স’ খ্যাত দলটি। রবিবার রাতে রাজধানী আক্রায় অনুষ্ঠিত বাছাইপর্বের ‘আই’ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জয় নিশ্চিত করে ঘানা।
এই জয়ের ফলে ১০ ম্যাচে ২৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করে গ্রুপের শীর্ষে অবস্থান নেয় তারা। আর তাতেই নিশ্চিত হয় ঘানার বিশ্বকাপ যাত্রা। একই গ্রুপের অন্য ম্যাচে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মাদাগাস্কার মালির কাছে ৪–১ গোলে হারায় তাদের সম্ভাবনার সমাপ্তি ঘটে।
ঘানার জয়ের নায়ক ছিলেন দলের তরুণ তারকা মোহাম্মদ কুদুস। প্রথমার্ধেই তার করা একমাত্র গোলই জয় এনে দেয় আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলের দেশটিকে। মধ্যমাঠ থেকে কড়া দারুণ আক্রমণের মাধ্যমে ৩৫ মিনিটে বল জালে জড়ান কুদুস। ম্যাচের বাকি সময়জুড়ে কোমোরোস চেষ্টা চালালেও, ঘানার রক্ষণভাগ দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করে প্রতিপক্ষের সব আক্রমণ।
কুদুস, যিনি বর্তমানে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ওয়েস্ট হ্যামে খেলছেন, ম্যাচ শেষে বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের নয়, পুরো ঘানার। বিশ্বকাপে খেলা সবসময়ই স্বপ্ন, আর আমরা সেটা ঐক্য ও বিশ্বাসের মাধ্যমে অর্জন করেছি।”
এই জয়ে আফ্রিকার পঞ্চম দল হিসেবে বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা নিশ্চিত করল ঘানা। এর আগে উত্তর আফ্রিকার চার দেশ—আলজেরিয়া, মিসর, মরক্কো ও তিউনিসিয়া—টিকিট পেয়েছিল। ফলে ঘানা হলো পশ্চিম আফ্রিকার প্রথম দেশ, যারা ২০২৬ বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে।
এ নিয়ে এটি হবে ঘানার পঞ্চম বিশ্বকাপ অংশগ্রহণ।
• প্রথমবার: ২০০৬ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে আত্মপ্রকাশ করে ঘানা।
• পরবর্তী অংশগ্রহণ: ২০১০, ২০১৪ এবং ২০২২ সালের টুর্নামেন্টে অংশ নেয় তারা।
• সেরা অর্জন: ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে শেষ আটে পৌঁছানো। লুইস সুয়ারেজের ‘হ্যান্ডবল বিতর্কে’ সেমিফাইনালের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল ঘানার, যা এখনো আফ্রিকান ফুটবলের ইতিহাসে স্মরণীয় মুহূর্ত।
আগামী বিশ্বকাপ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হবে। ৪৮ দল নিয়ে এবার হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ফিফা বিশ্বকাপ। আফ্রিকার ছয়টি দল সরাসরি খেলবে মূল পর্বে। ঘানা ইতিমধ্যে সেই তালিকায় নাম লেখালেও, এখন তাদের লক্ষ্য আরও দূর এগিয়ে যাওয়া।
দলের প্রধান কোচ ক্রিস হিউটন বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু বিশ্বকাপে যাওয়া নয়, ভালো খেলা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। ঘানার ফুটবল প্রতিভা বিশ্বকে দেখাতে আমরা প্রস্তুত।” তিনি আরও যোগ করেন,“দলটির তরুণ খেলোয়াড়রা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। যদি আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারি, তাহলে এবারের টুর্নামেন্টে ঘানা বড় চমক দেখাতে পারবে।”
বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিতের পর রাজধানী আক্রা ও আশেপাশের এলাকায় উল্লাসে মেতে ওঠে ফুটবলপ্রেমীরা। সড়কে, ক্যাফেতে, এমনকি গ্রামে-গঞ্জেও শুরু হয় উৎসব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে অভিনন্দনের বন্যা। ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আদ্দো এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি আমাদের জাতির জন্য গর্বের দিন। ব্ল্যাক স্টার্সদের অভিনন্দন জানাই—তারা আবারও প্রমাণ করেছে, ঘানা কখনও হাল ছাড়ে না।”
২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করে ঘানা শুধু আফ্রিকান ফুটবলে নয়, বৈশ্বিক মঞ্চেও আবার নিজেদের উপস্থিতির জানান দিল। অভিজ্ঞতা, ঐতিহ্য ও তরুণ তারকাদের মিশেলে গড়া এই দলটি নতুন করে স্বপ্ন দেখছে — আফ্রিকার জন্য ইতিহাস গড়ার।
Leave a comment