রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউরোপীয় দেশগুলোর উদ্দেশে তীব্র হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউরোপ যদি যুদ্ধের পথে হাঁটে, তবে রাশিয়া এখনই প্রস্তুত। দীর্ঘদিন ধরে চলমান রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধান নিয়ে মস্কোয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল পৌঁছানোর আগে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় ক্রেমলিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পুতিন বলেন,“আমরা ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। কিন্তু ইউরোপ যদি যুদ্ধ শুরু করতে চায়, রাশিয়া প্রস্তুত।”
তিনি অভিযোগ করেন, ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক উদ্যোগকে ইউরোপীয় নেতারা অগ্রহণযোগ্য শর্ত যোগ করে নস্যাৎ করছে।“তাদের কোনো শান্তির এজেন্ডা নেই। তারা জানে—যেসব প্রস্তাব তারা আনছে, রাশিয়া তা গ্রহণ করবে না,” মন্তব্য করেন পুতিন।
প্রায় চার বছরে পা দেওয়া রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা নতুন করে জোরদার হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত ৩০ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত হয় একটি উচ্চপর্যায়ের শান্তি বৈঠক, যেখানে অংশ নেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং জ্যারেড কুশনার।
ইউক্রেনের পক্ষে সেখানে নেতৃত্ব দেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের প্রধান রুস্তেম উমেরোভ।ফ্লোরিডা বৈঠকের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার মস্কোয় পৌঁছান উইটকফ ও কুশনার। তাদের সঙ্গে বৈঠকের আগে পুতিন এ কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেন।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী- ক্রেমলিনে পুতিন, স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনারের বৈঠক স্থায়ী হয় চার ঘণ্টারও বেশি। বৈঠকের শুরুতে পুতিন বলেন,“আপনাদের পেয়ে আমি খুবই খুশি।” জবাবে উইটকফ বলেন,“মস্কো একটি চমৎকার শহর।”
বৈঠকে পুতিনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্টের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী—কিরিল দিমিত্রিয়েভ এবং ইউরি উশাকভ। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাতের অবসান ঘটানোর রাজনৈতিক পথ অনুসন্ধান করা।
শান্তি আলোচনার বিষয়ে পুতিন বলেন,“যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সংঘাত শেষ করতে বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু ইউরোপীয় নেতারা এমন সব শর্ত যোগ করছেন, যা শান্তি প্রক্রিয়াকে পুরোপুরি অচল করে দিচ্ছে।” তিনি দাবি করেন, ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়াকে অগ্রহণযোগ্য প্রস্তাব দিয়ে যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করতে চাইছে।পুতিন আরও বলেন,“ট্রাম্পের পরিকল্পনার ওপর ইউরোপ যে অতিরিক্ত প্রস্তাব যোগ করেছে, তার উদ্দেশ্য একটাই—শান্তি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করা।” রাশিয়ার পক্ষ থেকে সরাসরি “যুদ্ধের প্রস্তুতির” ঘোষণা ইউরোপ–রাশিয়া সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে বিশ্লেষকদের মত।
পুতিন–উইটকফ–কুশনার বৈঠকের বিস্তারিত প্রকাশ না হলেও, কূটনৈতিক মহল মনে করছে, যুদ্ধবিরতির জন্য একটি প্রাথমিক কাঠামো তৈরির চেষ্টা চলছে। তবে ইউরোপের ভূমিকা নিয়ে রাশিয়া যেভাবে প্রকাশ্যে ক্ষোভ দেখিয়েছে, তাতে শান্তি প্রক্রিয়ার পথ আরও দীর্ঘ হতে পারে।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স
Leave a comment