১৯৯২ সালের ২৬ এপ্রিল, ইতিহাসের এক দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের অবসান ঘটে। এ দিন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে প্রায় ১৩ বছর ধরে চলা যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে আফগান যোদ্ধারা। এটি ছিল শুধু একটি যুদ্ধের সমাপ্তি নয়, বরং আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন।
১৯৭৯ সালে সোভিয়েত সেনারা আফগানিস্তানে প্রবেশ করলে শুরু হয় এই সংঘাত। আফগানিস্তানের জনগণের একাংশ, যাঁরা পরবর্তীতে ‘মুজাহিদিন’ নামে পরিচিত হন, দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুজাহিদিনদের এই দীর্ঘ সংগ্রামে নানা দেশ থেকে রাজনৈতিক ও সামরিক সহায়তা আসে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ পশ্চিমা জোটের পক্ষ থেকে।
এই যুদ্ধে হাজার হাজার আফগান জীবন হারায়, দেশজুড়ে ধ্বংস হয় অবকাঠামো, এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ শরণার্থী হয়ে পড়ে। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সেনারা আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তান ছাড়লেও তাদের সমর্থিত সরকারের সঙ্গে মুজাহিদিনদের লড়াই আরও তিন বছর অব্যাহত থাকে।
অবশেষে ১৯৯২ সালের এই দিনে, কাবুল শহর মুজাহিদিনদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং সাবেক কমিউনিস্ট সরকারের পতন ঘটে। মুজাহিদিনদের এই বিজয়ের মাধ্যমে আফগানিস্তানে একটি নতুন অধ্যায় সূচিত হয়, যদিও এরপরও দেশটি রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং গৃহযুদ্ধের শিকার হতে থাকে।
এই বিজয় কেবল আফগানিস্তানের জন্য নয়, স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব রাজনীতির জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। এটি প্রমাণ করে যে, একটি বৃহৎ পরাশক্তির বিরুদ্ধে দীর্ঘ প্রতিরোধ এবং স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত আন্দোলন সফলতা আনতে পারে।
১৯৯২ সালের ২৬ এপ্রিল তাই আজও আফগান জনগণের প্রতিরোধ, আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে স্মরণীয়।
Leave a comment